×
  • প্রকাশিত : ২০২১-০৫-২৫
  • ৫৯৭ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রবল শক্তি নিয়ে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। এটি আরো প্রবলভাবে ঘণীভূত হয়ে উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং আগামীকাল দুপুর নাগাদ ভারতের উত্তর উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এখন সাগর উত্তাল রয়েছে, বাড়ছে বাতাসের গতিবেগ। ইয়াসের প্রভাবে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে, কোথাও কোথাও দমকা হাওয়াও বইছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রাসহ দেশের চার সমুদ্র বন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সতর্ক সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ৮৯ কিলোমিটার যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়া আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সমুদ্র খুবই বিক্ষুদ্ধ¦ অবস্থায় রয়েছে।
এটি আজ বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৫৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৫০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটোয়াখালি, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম জেলাসমূহের নি¤œাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৬ ফুট উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। দুর্যোগ মোকাবিলায় বিমান বাহিনী রেকি মিশন, সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ অপারেশন এবং মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য বিভিন্ন ধরনের বিমান ও হেলিকপ্টার প্রস্তুত রেখেছে।
আজ আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাতীয় যেকোনো ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় দেশের প্রয়োজনে সহায়তা করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-এর মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর কারণে উপকূলীয় এলাকাসহ সারাদেশের ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ ও আদান-প্রদানের লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এনডিআরসিসি, সিপিপি অধিশাখা এবং সংশ্লিষ্ট শাখাসমুহ খোলা থাকবে ।
আজ রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আগামীকাল সরকারি ছুটির দিনে সংশ্লিষ্ট শাখাসমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে যথাসময়ে অফিসে উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বাসসকে জানিয়েছেন, সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন পুলিশ, আনসার, বিজিবি, সিপিপি (ঘূর্নিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি)’র ভলান্টিয়ারসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রস্তুত রয়েছেন। নির্দেশনার ভিত্তিতে তারা কাজ করবেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াসকে আমরা কঠোর পর্যবেক্ষণে রেখেছি। এটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের পর্যবেক্ষণ অব্যাহত থাকবে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জনগণকেও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।’
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবেলায় কন্ট্রোল রুম চালুসহ ৮ নির্দেশনা দিয়েছেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। রোববার ইয়াস মোকাবেলায় দিকনির্দেশনা প্রদানে মন্ত্রণালয়ে সভাকক্ষে এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইয়াস এর পর্যবেক্ষণ ও তথ্য সংগ্রহে কন্ট্রোল রুম চালু করেছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় (ফোন নম্বর ০১৩১৮২৩৪৫৬০)।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, উপকূলাঞ্চলের বাঁধসহ সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শন করে মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পাঠাতে হবে। প্রয়োজনীয় বালু, জিও ব্যাগ এবং জরুরী শ্রমিকের ব্যবস্থা রাখতে হবে। মাস্ক, খাবার স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণের ব্যবস্থা রাখতে হবে। সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার ৮ টি পোল্ডার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা থাকতে হবে। লোকজন সরিয়ে নিতে প্রয়োজনমতো নৌযান ব্যবস্থা থাকতে হবে। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
এছাড়া, মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সার্বক্ষণিক কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে হবে। কোথাও ক্ষয়ক্ষতির খবর পেলে জেলা প্রশাসক ও জেলা পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে অবহিত করতে হবে। জনপ্রতিনিধি, জনগণ এবং মিডিয়ার সাথে সমন্বয় করে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে কাজ করতে হবে।
বাসস’র চট্টগ্রাম অফিস জানায়, চট্টগ্রামে বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ আঘাত হানলে নগরীর উপকূলীয় ওয়ার্ডগুলোতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতি মোকাবেলায় উপকূলীয় ওয়ার্ড গুলোতে ৬০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম জানান, সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (নম্বর : ০৩১-৬৩৩৬৪৯) খোলা হয়েছে। মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ৪ হাজার সিপিপি ও রেড ক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
চসিকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির প্রধান কাউন্সিলর মো. জহুরুল আলম জসিম বলেন, পতেঙ্গা, হালিশহর, কাট্টলীসহ উপকূলীয় ওয়ার্ড গুলোতে ঘূর্ণিঝড়ে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
বাসস’র ভোলা সংবাদদাতা জানান, জেলায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সম্ভাব্য ক্ষয় ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে দুর্গম চরাঞ্চল থেকে জনসাধারণকে নিরাপদে সরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে ট্রলার-স্পিডবোটের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে আসছে মানুষ। ইতোমধ্যে ঘূণিঝড়ের প্রভাবে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরফ্যাসনের ৩টি গ্রামসহ বিভিন্ন নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ৮ হাজার মানুষ।
উপকূলের বাসিন্দাদের সতর্ক করতে মাইকিং চালাচ্ছে সিপিপি, তথ্য অফিস ও রেডক্রিসেন্ট এর সদস্যরা।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকা জেলা ত্রাণ ও র্পূর্নবাসন কর্মকর্তা মো. মোতাহার হোসেন বাসস’কে জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবেলায় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সকাল থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ৪০টি স্পট থেকে জনসাধারণকে নিরপদে সরিয়ে আনার কাজ করছে কোষ্টগার্ড, নৌ পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন। এসব স্থান থেকে মোট ৩ লাখ ১৮ হাজার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হবে। একইসাথে প্রস্তুত রাাখা হয়েছে ৭০৯টি আশ্রয়কেন্দ্র। যেখানে মোট ৫ লাখ ৩৬ হাজার মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করতে পারবে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, দুর্যোগ মোকাবেলায় জেলায় মোট ৭৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে স্যালাইন, ওষুধসহ অন্যান্য ব্যবস্থা। জেলায় খোলা হয়েছে ৮টি কন্ট্রোল রুম। মাঠে কাজ করছে মোট ১৩ হাজার সেচ্ছাসেবক। জরুরী প্রয়োজনে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে গঠন করা হয়েছে ১৪টি টিম। প্রতিবন্ধী নারী ও শিশুদের নিরাপত্তায় আলাদা আলাদা টিম গঠন করা হয়েছে।
বরগুনা সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবেলায় বরগুনায় ৬৪০টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ছয়টি মেডিকেল টিম, দুই শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় নগদ এক কোটি ৩১ লাখ টাকা ও খাদ্য সহায়তা হিসেবে ৩৫৮ মেট্রিক টন চাল মজুদ আছে। জেলা জুড়ে ঝড়ো হাওয়া চলছে।
বরগুনা পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী কায়ছার আলম জানান, জেলায় ৮০৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আছে। এরমধ্যে নানা কারণে ৫০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের উচ্চতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়নি। তাই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে যদি ১৫ থেকে ১৮ ফুট উচ্চতায় নদ-নদীর পানি প্রবাহিত হয়, তাহলে এ বাঁধ প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat