×
  • প্রকাশিত : ২০২৩-০৩-২৭
  • ৫০৫ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

বেদখল হওয়ার এক সপ্তাহ পার হলেও উদ্ধার করা যায়নি রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ইমেইল সার্ভার। সাইবার দুর্বৃত্তদের বেঁধে দেওয়া সময়ের বাকি আর মাত্র তিন দিন। অন্যদিকে ইমেইল সার্ভার ফেরত দেওয়ার জন্য বিমান কর্তৃপক্ষের কাছে ’৫০ লাখ ডলার’ দাবি করেছে দুর্বৃত্তরা। নয়তো সার্ভারের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। বিমানের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত ১৭ মার্চ বিমানের ই–মেইল সার্ভার র‌্যানসমওয়্যারে আক্রান্ত হয়। র‌্যানসমওয়্যার হলো এক ধরনের ক্ষতিকর সফটওয়্যার প্রোগ্রাম বা ম্যালওয়্যার, যা কোনো ডিজিটাল ডিভাইসে সংরক্ষিত তথ্যে ঢুকতে বাধা দেয়। এই ম্যালওয়্যারে আক্রান্ত হলে ডিভাইস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অথবা ডিভাইসে থাকা তথ্য চুরি করে নিতে পারে ম্যালওয়্যারটি ছড়ানোর পেছনে থাকা সাইবার দুর্বৃত্তরা।

বিমানের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সার্ভার হ্যাকড হওয়ার পর থেকে কয়েক দফায় সতর্ক করে বিমানের কাছে ‘৫০ লাখ ডলার’ চেয়েছে সাইবার দুর্বৃত্তরা। সার্ভার হাতিয়ে নিয়ে দুর্বৃত্তরা ঘটনার দিন বেলা সোয়া ২টার দিকে বিমানকে প্রথম নিজেদের দাবির কথা জানায় এবং দাবিকৃত অর্থ দেওয়ার জন্য ১০ দিনের সময় বেঁধে দেয়। পরে ২১ মার্চ হ্যাকাররা জানায়, তাদের কাছে বিমানের ১০০ গিগাবাইটের বেশি ব্যক্তিগত ও গোপনীয় তথ্য রয়েছে। এ ছাড়া বিমানের অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক থেকে অনেক তথ্য–উপাত্ত তারা ডাউনলোড করে রেখেছে। বিমান যদি তাদের দাবি মেনে না নেয়, তাহলে তারা নিজেদের ব্লগে এগুলো প্রকাশ করে দেবে।

সাইবার দুর্বৃত্তরা হুঁশিয়ারি দিয়ে জানায়, বিমানে ভ্রমণ করা যাত্রী ও কর্মীদের পাসপোর্টের তথ্য এবং বিভিন্ন ক্যারিয়ারের তথ্যও তাদের কাছে রয়েছে। এসব তথ্য তারা ফাঁস করে দেবে।

বিমান সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সিকে তারা চিঠি দিয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। সংবাদ বিজপ্তি দিয়ে বিমান বাংলাদেশ জানায়, গণমাধ্যম তাদের সার্ভার হ্যাক হওয়া নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করছে।

বিমান কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, ১৮ মার্চ তাদের কিছু কম্পিউটার ও সার্ভার ম্যালওয়্যারে আক্রান্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে সার্ভারটি বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং ইমেইল সার্ভিস বন্ধ করা হয়। বিকল্প ব্যবস্থায় বিমানের অপারেশনাল কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পর্কিত ইমেইল আইডিগুলো মাইক্রোসফট ক্লাউড সার্ভিসের মাধ্যমে চালু রাখা হয়েছে।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম শুক্রবার একটি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, তাদের সার্ভার হ্যাকড হয়নি, ম্যালওয়্যারে আক্রান্ত হয়েছিল। সার্ভারটি বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এতে করে ই–মেইল সেবায় কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। তবে তার সমাধান করা হয়েছে। সার্ভার হ্যাকড ও অর্থ দাবির বিষয়টি নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে।

তবে ঘটনাটি জানার পরপরই বিষয়টি সরকারের ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সিকে জানায়নি বিমান কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর তারা চিঠি দেয়।

সরকার গত সেপ্টেম্বরে ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে ঘোষণা করে, যার মধ্যে বিমান বাংলাদেশও রয়েছে। কিন্তু উন্নত বিশ্বে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের নাম সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করার নজির নেই। এই ২৯টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করে বরং প্রতিষ্ঠানগুলোর ঝুঁকি বাড়ানো হয়েছে বলে মনে করছেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, নাম প্রকাশের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বৃত্তদের টার্গেটে পরিণত হয় সহজে।

সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী জায়গা থেকে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তার জন্য ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হলেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কিছু কর্মকর্তার অপেশাদার আচরণে ভুল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে মনে করছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat