গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য বিপননের জন্য বাজার হচ্ছে। টুঙ্গিপাড়া-ঢাকা মহাসড়কের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী ই্উনিয়নের গিমাডাঙ্গায় চালু হচ্ছে উদ্যোক্তা বাজার।
ইতিমধ্যেই এই বাজারের ৩টি সেড ও একটি অত্যাধুনিক ওয়াশ ব্লক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে উদ্যোক্তা বাজারের সাইবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রশাসন।
এই বাজারে উদ্যোক্তাদের উৎপদিত খাদ্য পণ্যের পাশাপাশি আদিপেশায় নিয়োজিতদের উৎপাদিত বাঁশ, বেত, চামড়া ও লৌহজাত পণ্য বিক্রি করা হবে। এছাড়া এখানে এটি সুভ্যানির কর্নার থাকবে। সেখানে জেলার ব্রাডিং পণ্য, জেলা পরিচিতির বিভিন্ন ধরণের মেমেন্ট, বইসহ আকর্ষণীয় সব পণ্যের সমাহার ঘটবে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ.কে.এম হেদায়েতুল ইসলাম টুঙ্গিপাড়া উপজেলার যুব সমাজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আদি পেশায় নিয়োজিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়নে উদ্যোক্তা উন্নয়ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি কৃষি, মৎস্য, যুবউন্নয়ন অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বয়ে যুবকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। এটি চলমান রয়েছে। এছাড়া ওই কর্মকর্তা আদিপেশায় নিয়োজিত কামার, মুচি, ঋষিসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মানুষকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এইভাবে তিনি প্রায় ৫০০ উদ্যোক্তা সৃষ্টি করেছেন। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি তাদের ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। উদ্যোক্তারা এখন পণ্য উৎপাদন করে হাট-বাজারে বিক্রি করছেন। ওইসব উদ্যোক্তারা এখন ভাল আছেন। উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য টুঙ্গিপাড়ার উদ্যোক্তা বাজারে বিক্রির জন্য উদ্যোক্তা বাজার স্থাপন করে দিচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। এখানে একজন কিংবা একাধিক উদ্যোক্তাকে বাজারের দায়িত্ব দেয়া হবে। তারা উদ্যোক্তাদের পণ্য এখানে এনে বিক্রি করবেন। টুঙ্গিপাড়ায় সরকারিভাবে যারা বেড়াতে আসাবেন তাদের উদ্যোক্তা বাজারে নিয়ে যাবে উপজেলা প্রশাসন। এইভাবে এই বাজারকে জনপ্রিয় করা হবে।
সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে আমরা উদ্যোক্তা উন্নয়ন উদ্যোগ গ্রহণ করি। টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বেকার ও শিক্ষার্থীরা এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তারা কর্মসংস্থানের পথ খুঁজে পেয়েছে। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তারা অবদান রখেছেন। এছাড়া আদি পেশায় নিয়জিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে স্মার্ট বাংলাদেশর উপযোগি করে গড়ে তুলতে তাদেরও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে আধুনিক কলাকৌশল ও বিভিন্ন মেশিনারিজ ব্যবহার করে বাঁশ-বেত, দা,কাচি, ছুরি, বটি, জুতা-স্যান্ডেল, ভ্যানেটি ব্যাগসহ অন্যান্য পণ্য উৎপাদন করতে পারবেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়েতে চান। আদি পেশার মানুষ যদি যুগোর সাথে তাল মিলিয়ে স্মার্ট না হন, তাহলে তারা উন্নয়নের মূল ¯্রােতধারা থেকে পিছিয়ে পরবেন। তাই তাদের উন্নয়নের মূল ¯্রােতধারায় সামিল করতে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আর আদিপেশা হারিয়ে গেলে দেশ ও সমাজে এক ধরণের সংকট সৃষ্টি হবে। তাই তাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তাদের পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করে দিতে আমরা টুঙ্গিপাড়ায় উদ্যোক্তা বাজার স্থাপন করছি।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার মিত্রডাঙ্গা গ্রামের স্বপন মজুমদার বলেন, আমি গোপালগঞ্জ সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। আমি উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ নিয়েছি। ঋন নিয়ে গ্রামে মৎস্য ও কৃষি খামার করেছি। আমার এখানে ১৮ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি মাসে আমি এখান থেকে লাখ-লাখ টাকা আয় করছি। এই জন্য টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম হেদায়েতুল ইসলামকে আমি স্বাগত জানাই। এছাড়া আমি কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৯ সালে জাতীয় যুব পুরস্কার পেয়েছি।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার নিলফা বাজারের বাঁশ ও বেত শিল্পের কারিগর শ্যামল বিশ্বাস (৫৫) বলেন, আমরা আগে সনাতন পদ্ধতিতে বাঁশ-বেতের কাজ কারতাম। প্রশিক্ষণে যন্ত্রের সাহায্যে আধুনিক পদ্ধতিতে বাঁশ-বেতের পণ্য উৎপাদনের কৌশল রপ্ত করেছি। ঋণ পাওয়ার পর এটি প্রয়োগ করছি। আগের থেকে বেশি পণ্য উৎপাদন করতে পারছি। এই পণ্যের গুনগত মান ভাল। তাই বাজারে চাহিদাও বেশ বেড়েছে। এগুলো বিক্রি করে আমরা ভাল আছি।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার খালেক বাজারের জুতা স্যান্ডেলের কারিগর রবু বিশ্বাস (৫৭) বলেন, আগে হাতে জুতা, স্যান্ডেল সেলাই ও তৈরী করাতাম। এতে কষ্টের শেষ ছিল না। সারাদিনে ১ জোড়া জুতা স্যান্ডেল তৈরি করতে পারতাম না। পরিবার পরিজন নিয়ে চরম অভাব অনটনের মধ্যে ছিলাম। প্রশিক্ষণ ও ঋণ পাওয়ার পর যন্ত্রের ব্যবহারের সাহায্যে প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ জোড়া জুতা স্যান্ডেল ও ভ্যানেটি ব্যাগ তৈরি করছি। এখানে পরিবারের ২ সদস্য কাজ করছেন। এখন পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ ভাল আছি।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল মামুন বলেন, উদ্যোক্তা উন্নয়ন উদ্যোগের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া উদ্যোক্তা বাজার স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আমরা দ্রুত এই বাজার শুরু করতে পারব। এটি শুরু হলে উদ্যোক্তারা তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রির আরো বড় বাজার পেয়ে যাবেন। বেশি-বেশি পণ্য বিক্রি করে তারা লাভবান হবে। তাদের উৎপাদিত পণ্য যাতে দেশের ধরতে পারে সেই জন্যও আমরা কাজ করছি।