‘১৯৭১ এর গণহত্যা : বিশ্ব স্বীকৃতি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, ১৯৭১ সালের গণহত্যার স্বীকৃতি আদায় করতে হলে বিশ্বব্যাপী জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে গণমাধ্যমসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একযোগে কাজ করতে হবে।
গণহত্যা দিবস স্মরণে জাতীয় প্রেসক্লাব আজ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
বক্তারা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের দেশে সংগঠিত গণহত্যাকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন তাদের দেশপ্রেম সম্বলিত বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে। বিশ্বের অনেক দেশ গণহত্যার স্বীকৃতি পেয়েছে। ১৯৭১ সালে এদেশে যা হয়েছে, পৃথিবীর ইতিহাসে ২৭০ দিনে ত্রিশ লাখ মানুষ শহীদ হয়নি; এতো অল্প সময়ে এতোবড় হত্যাযজ্ঞ কোথাও হয়নি।
তারা বলেন, বাংলাদেশে সংগঠিত এই গণহত্যা ও বধ্যভূমি সম্পর্কে সবাইকে জানাতে উদ্যোগী ভূূমিকা পালন করতে এগিয়ে আসতে হবে। এসময় তারা গণহত্যার সময়ে সংশ্লিষ্ট দেশী-বিদেশী সবার সংরক্ষণে থাকা নানা তথ্যসমৃদ্ধ অডিও এবং ভিডিও সংগ্রহ করে তা সংরক্ষণের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
বক্তারা এসময় গণহত্যা বিষয়ে সব ডকুমেন্ট সংগ্রহ করতে একটি গণহত্যা বিষয়ক জাদুঘর প্রতিষ্ঠারও আহবান জানান।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান খান এমপি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক , বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব আব্দুল জলিল ভূঁইয়া ও প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভুঁইয়া।
শাহজাহান খান বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী বাহিনী ঘুমন্ত মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সঠিক হিসাব না থাকলেও একরাতে নানা বয়সী প্রায় লক্ষাধিক মানুষকে হত্যা করেছিল। নয় মাসে হত্যা করেছিল প্রায় ৩০ লাখ মানুষকে।
তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশের গণহত্যাকে বিশ্ব স্বীকৃতি দিতে গিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে একটি কুচক্রী মহল তাদের ঘৃণ্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে প্রমাণ করার অপচেষ্টা চালিয়েও যাচ্ছে।
বাংলাদেশের গণহত্যাকে বিশ্ব স্বীকৃতি দিতে তিনটি প্রস্তাবনা দিয়ে শাহজাহান খান বলেন, গণমাধ্যমকে আরো সোচ্চার হতে হবে। গণহত্যার যে বিভীষিকা ও নারকীয় হত্যাযজ্ঞ তার বেদনা, অনুভূতি এসব বোধ ও চেতনা দেশসহ বিশ্বব্যাপী মানুষের মনে জাগিয়ে তুলতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গণহত্যা দিবস বিষয়ে অনুষ্ঠান বাধ্যতামূলক করতে হবে।
আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ১৯৭৫ সালের পর স্বাধীনতাবিরোধী কুচক্রি চক্র দীর্ঘদিন বাংলাদেশের মাটি থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার সব প্রমাণ লোপাট করেছিল। দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের শৌর্য বীর্যের কথা জানতে পারেনি।
তিনি বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের ভিডিওগ্রাফী সম্পর্কে জানতে পারেনি। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন প্রথমবারের মতো তাঁর ভাষণের এই ভিডিও জনসপেক্ষে এলে দেশের মানুষ তার সম্পর্কে আরো গভীরভাবে জানতে পারেন।
সময় এসেছে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের বুঝাতে হবে এদেশে কি ধরনের নারকীয় ঘটনা ঘটেছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বিএফইউজের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, বিশ্বের অনেকে তাদের দেশের ঘটে যাওয়া গণহত্যা নিয়ে স্বীকৃতি আদায় করেছে। বাংলাদেশের গণহত্যাকে বিশ্ব স্বীকৃতি আদায়ে দেশে ও দেশের বাইরে বিশ্ব জনমত সৃষ্টি করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তাদের নির্মমতা আর নিষ্ঠুরতার যে করুণ চিত্র তা আরো বেশি করে সবাইকে জানাতে কাজ করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।