নিজস্ব প্রতিনিধি:- প্রায় আড়াই মাস পর আবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সদ্য সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য এবং সব শেষ অস্ট্রেলিয়া সফর বিষয়ে আগামী ২ মে বুধবার গণভবনে সাংবাদিকদের ডেকেছেন সরকার প্রধান।
সেদিন বিকাল চারটায় তিন দেশ সফর নিয়ে কথা বলবেন তিনি। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ কথা জানানো হয়।
শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় সফরে দেশের বাইরে গেলে দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলন করে থাকেন। এতে সফরের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য ছাড়াও দেশে বিদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনায় তার অবস্থান উঠে আসে।
সবশেষ বিদেশ সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন হয়েছে ১৯ ফেব্রুয়ারি। তার আগে ইতালি ও ভ্যাটিকান সফর নিয়ে এই আয়োজন হলেও সে সময় প্রশ্ন ফাঁস, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড, আগামী জাতীয় নির্বাচন বিষয়েই বেশি প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।
গত ১৬ এপ্রিল সৌদি আরবে সৌদি নেতৃত্বাধীন মুসলিম দেশগুলোর জোটের যৌথ সামরিক মহড়ার সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। তার আগের দিন আগে দেশ ছাড়েন তিনি।
সেখানে সামরিক মহড়া শেষে শেখ হাসিনা কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দিতে যান যুক্তরাজ্যে। এই দেশ থেকে তিনি দেশে ফেরেন ২৩ এপ্রিল।
দেশে ফেরার তিন দিন পরেই প্রধানমন্ত্রী যান অস্ট্রেলিয়া। গ্লোবাল সামিট অব উইমেনে যোগ দিতে তিনি ঢাকা ছাড়েন ২৭ এপ্রিল। ৩০ এপ্রিল দেশে ফেরেন তিনি।
এই সম্মেলনে বাংলাদেশে নারী শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নে অবদান রাখায় শেখ হাসিনাকে দেয়া হয় গ্লোবাল উইম্যান লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড।’
যুক্তরাজ্যে সাবেক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের স্বাধীন দেশগুলোর মোর্চা কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দেয়ার পাশাপাশি সেখানে বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দেন শেখ হাসিনা। এ সময় দুই বার তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কথা বলেছেন।
আবার তারেক রহমান রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য পাসপোর্ট জমা দেয়ার পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, বিএনপি নেতার বাংলাদেশি পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেয়ার অর্থ হচ্ছে তিনি আর বাংলাদেশের নাগরিক নন। বিএনপির পক্ষ থেকে এই ব্যাখ্যা মেনে নেয়া হয়নি।
প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে এই বিষয়টি ছাড়াও তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের চেষ্টার বিষয়ে বিস্তারিত জানার সুযোগ আছে।
২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে আছেন। তিনি যে শর্তে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে সে দেশে গিয়েছিলেন, সে শর্ত পরে আর পূরণ হয়নি। কথা ছিল জামিনের মেয়াদ শেষ হলে এবং চিকিৎসা শেষে তিনি দেশে ফিরবেন।
এর মধ্যে সম্প্রতি জানা গেছে তারেক রহমান ২০১৪ সালের ২ জুন বাংলাদেশের পাসপোর্ট জমা দিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন।
এর মধ্যে বিদেশে অর্থপাচার এবং দুর্নীতির দুই মামলায় তারেক রহমানের ১৭ বছর জেল এবং ২২ কোটিরও বেশি টাকা জরিমানা হয়েছে। আর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তার মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাজ্যে অবস্থানের সময় সেখানকার বিএনপির এক কর্মসূচিতে হিন্দু ধর্মের দুই অবতারের সঙ্গে শেখ হাসিনাকে নিয়ে সাম্প্রদায়িক ও অবমাননাকর স্লোগান দেয়া হয়েছে। এই বিষয়টি নিয়েও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য জানার সুযোগ আছে।
এর বাইরে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর বিষয়ে বিএনপির দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন জানতে চাইতে পারেন গণমাধ্যমকর্মীরা।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হওয়ার পর থেকে বিএনপি নেত্রী ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। খালেদা জিয়া দীর্ঘ দিন ধরেই নানা রোগের চিকিৎসা করাচ্ছেন। আর বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, তিনি কারাগারে করুণ অবস্থায় আছেন।
মুক্ত থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় নিয়োজিত একজন দাবি করেছেন, খালেদা জিয়া পক্ষাঘাত বা প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হতে পারেন। অন্য একজন চিকিৎসক দাবি করেছেন, বিএনপি নেত্রী অন্ধ হয়ে যেতে পারেন। আরেকজন চিকিৎসক দাবি করেছেন, বিএনপি নেত্রীর প্রস্রাব-পায়খানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।