নিজস্ব প্রতিনিধি:- ময়মনসিংহ জেলায় গত এক সপ্তাহে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ছয়জন নিহতের পর বিভিন্ন মামলার আসামিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। গত কয়েক দিনে বিপুল পরিমাণ আসামি ধরা দিয়ে কারাগারে গেছেন।
পলাতক আসামিরা আদালতে আত্মসমর্পণ করে কারাগারে যেতে চাইছে। আসামিরা আইনজীবী নিয়োগ করে জামিনের আবেদনও করছে না।
চলতি মে মাসের শুরুর দিকে মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। আর এই অভিযান শুরুর পর থেকে বন্দুকযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি নিহতের ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহে।
যদিও নিহতদের মধ্যে সন্দেহভাজন মাদক বিক্রেতা কম। দুইজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে মাদক সংশ্লিষ্টতার। বাকিরা হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির মামলার আসামি।
যারা ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রাণ হারিয়েছে তারা সবাই মামলার পলাতক আসামি ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এই অভিযান শুরুর পর মাদক, হত্যাসহ সন্ত্রাসের বিভিন্ন মামলার আসামিরা আদালতে সরাসরি আত্মসমর্পণ করে স্বেচ্ছায় কারাগারে যাচ্ছে।
ময়মনসিংহ জজকোর্টের জ্যেষ্ঠ্য আইনজীবী মো. মিল্লাত বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে আসামিরা সরাসরি আদালতে যাচ্ছে। তারা জামিনের আবেদনও করছে না। তারা জেলে থাকতে চায়।’
অন্য একজন আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেছেন, ‘বাইরে থাকলে ক্রসফায়ারের ভয়ে আছে এরা। কারাগারে থাকলে জীবন নিরাপদ ভেবে তারা সেখানেই থাকতে চাইছে।’
মোট কতজন আসামি আত্মসর্পণ করেছে এই তথ্য অবশ্য কারও কাছে। তবে এই সংখ্যাটি নিশ্চিতভাবেই শতাধিক বলে জানান ওই আইনজীবী।
অভিযান শুরুর পর ময়মনসিংহে ডাকাতি, ছিনতাই, খুন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও মাদক বিক্রির অভিযোগ কম পাওয়া যাচ্ছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। মাদক বিক্রির চিহ্নিত হাটগুলো এখন অনেকটাই ফাঁকা।
বন্দুকযুদ্ধ নিয়ে ময়মনসিংহ পুলিশের বর্ণনা বরাবরের মতোই। আসামি নিয়ে যাওয়ার পথে কোথাও তাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয় এবং পাল্টা গুলি চালানোর এক পর্যায়ে আসামিরা নিহত হচ্ছেন। কোনো কোনো অভিযানে পুলিশ আহত হচ্ছে বলেও জানানো হয়। তবে যারা গুলি করে তারা কেউ ধরা পড়ে না।
যত বন্দুকযুদ্ধ
১৯ মে দিবাগত গভীর রাতে ময়মনসিংহ শহরের মাসকান্দা গনশার মোড় এলাকায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ চিহ্নিত মাদক ‘চোরাকারারি’ বিপ্লব নিহত হন। যারা শহরে মাদকের কারবার যারা নিয়ন্ত্রণ করতে, তাদের একজন যারা মা
ঘটনাস্থল তল্লাশি করে দুইশ গ্রাম হিরোইন, দুইশটি ইয়াবা বড়ি, তিনটি গুলির খোসা ও দুটি চাকু উদ্ধার করেছে।
আগের রাতে জেলার নান্দাইল উপজেলার চৌরাস্তা এলাকায় গোয়ন্দা পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন একটি হত্যা মামলার আসামি মো: ইমন।
১৫ মে গভীর রাতে গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার বারইহাটী বটতলায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন সন্দেহভাহন ‘ডাকাত সর্দার’ আজিজুল। তার নেতৃত্বে ময়মনসিংহ এবং আশেপাশের জেলায় ডাকাতি চলত বলে জানিয়েছে পুলিশ।
১৩ মে গভীর রাতে শহরের কাঁচিঝুলি এলাকায় পিউ বাবু হত্যা মামলার আসামি সারফান ইসলাম ওরফে বাবু নিহত হন ‘বন্দুকযুদ্ধে’।
১১ মে গভীর রাতে জেলা শহরের জয় বাংলা বাজার ও পরানগঞ্জ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন হত্যা মামলার আসামি আলমগীর ও তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারী সিরাজুল।
পুলিশ বলছে রমজানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে নজরদারির পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধেও এই অভিযান শুরু করেছে তারা।
জেলা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা বেড়েছে । অভিযানের কারণে গা-ঢাকা দিচ্ছে অপরাধীরা।
মাদকের কারবারি, ছিনতাইকারীসহ সন্ত্রাসীদের চিহ্নিতকরণ ও তৎপরতা দমন করতে মহাসড়ক থেকে শুরু করে পাড়া, মহল্লা, ওয়ার্ডে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
জানতে চাইলে পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘অপরাধের ক্ষমা নেই। সকল অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
‘আমি যতদিন ময়মনসিংহে দায়িত্ব পালন করব, ততোদিন মাদকের বিরুদ্ধে আমার সর্বোচ্চ অবস্থান থাকবে। মাদকের বিষয়ে কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না।’