অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ৮৩তম জন্মদিন উদযাপিত
নিজস্ব প্রতিনিধি:- অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী শ্রেণি কক্ষের ছাত্রদের শিক্ষক। এছাড়া তিনি শিক্ষকদের, সাহিত্যিকদের, রাজনৈতিক কর্মীদের ও শ্রমজীবী মানুষের শিক্ষক। আমরা তাকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে পাইনি। কিন্তু তিনি জাতির অধ্যাপক।
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর মানববিদ্যা গবেষণা কেন্দ্রে ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ৮৩তম জন্মদিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে চারণ সাংস্কৃতিককেন্দ্র গান পরিবেশন করেন। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে ফুল দিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান।
পরে ‘সমাজ পরিবর্তনে আমাদের করণীয় কী’ প্রতিপাদ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অধ্যাপক আজফর হোসেনের সঞ্চালনায় ও অধ্যাপক আহমেদ কবিরের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী, ইংরেজি দৈনিক দ্য নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবির, ওয়াল্ড ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান, কমরেড খালেকুজ্জামান, লেখক ও সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, লেখক গওহর নঈম ওয়ারা, জনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ প্রমুখ।
লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলামের জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, দেশের শিক্ষক সমাজের মধ্যে দোকানদারি করবার একটা প্রবণতা আছে। কিন্তু অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী দোকানদারি না করে শিক্ষকতা করেছেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী জীবিত আরজ আলী মাতুব্বর অথবা সক্রেটিস। তিনি অত্যান্ত সাহসী ব্যক্তি। যা ন্যায্য মনে করেন তাই বলেন।
নুরুল কবির বলেন , তার সময়ে অন্য বিভাগ থেকে ছাত্র-ছাত্রী বক্তব্য শুনতে আসত। এতে ক্লাস-বারান্দা ভরে যেত। তিনি শুধু ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক নন। তিনি রাজনৈতিক সহিত্যের আড়ষ্টতা থেকে বাংলা ভাষাকে মুক্তি দিয়েছেন।
আমাদের করণীয় কী এর পরিপ্রেক্ষিতে নুরুল কবির বলেন, অন্যায্যতাবোধ যতক্ষণ উপলব্ধি করা যাবে না ততক্ষণ এর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো যাবে না। তিনি বুদ্ধিবৃত্তিক উন্মোচণের জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের তৈরি করার কথা বলেন।
আবদুল মান্নান বলেন, শিক্ষকের গুড, বেস্টসহ কয়েক প্রকারভেদ রয়েছে। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বেস্ট শিক্ষক নন, তিনি আউটস্টান্ডিং শিক্ষক। কারণ আউটস্টান্ডিং শিক্ষকরা জাতিকে অনুপ্রাণিত করেন।
কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, সমাজের শোষিত শ্রেণির মানুষের একীভূত করা ছাড়া বিপ্লব সম্ভব নয়। সমাজ পরিবর্তন করতে হলে পরিবর্তনকারীদের পাশে দাঁড়ান, নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ান।
জন্মদিনের শুভেচ্ছার জবাবে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সবার প্রতি অভিবাদন জানিয়ে বলেন, আমার উচিত ছিল লেখক হওয়া।
আমাদের করণীয় কি এর পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমরা বড় রাষ্ট্র ভেঙ্গে ছোট রাষ্ট্র তৈরি করেছি। কিন্তু রাষ্ট্রে চরিত্র বদালায়নি। পুঁজিবাদের মুক্তি এসেছে কিন্তু দেশে মানুষের মুক্তি আসেনি। সামাজিক মালিকানার বিষয়টি সামনে আনা কর্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর জন্য প্রয়োজন হবে জ্ঞান আর নৈতিকতার দিক থেকে বুর্জয়াদের চেয়ে এগিয়ে থাকা। জ্ঞান ছাড়া আমরা পরিবর্তন আনতে পারব না।
বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় একটি প্লাটফর্ম থাকবে উল্লেখ করে তিনি একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশের মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করা খুবই দরকার।