×
ব্রেকিং নিউজ :
  • প্রকাশিত : ২০২১-১১-১৯
  • ৬৩৭ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী বাজারের পাশে প্রতি শুক্রবার ‘মেহমান খানার’ আয়োজন করা হয়। স্থানীয় সাংবাদিক হারুন অর রশিদ এ ‘মেহমান খানার’ আয়োজন করে থাকেন।
উপজেলার ৮ ইউনিয়নসহ পাশের রাণীশংকৈল ও সদর উপজেলা থেকে ভিক্ষুক, মানসিক ভারসাম্যহীন ও নিম্ন আয়ের মানুষ এখানে একবেলা মাছ-মাংস দিয়ে ভাত খেতে আসেন। শুরুতে উপস্থিতি কম থাকলেও এখন প্রতি শুক্রবার প্রায় ২০০ মানুষ পেট ভরে খেতে আসেন। আজ শুক্রবারও প্রায় ২৫০ জন দরিদ্র, দুস্থ, অসহায় ও নিরন্ন মানুষের খাবারের আয়োজন হয়েছে মেহমান খানায়।
‘হামরা ভিক্ষুক বারে, একবেলা খাই তো একবেলা না খায়ে থাকি। দিনের খাওয়া যোগাড় করা হামার তানে কষ্টের সেইঠে মাছ-মাংস দিয়া পেট ভরে ভাত খাবা পারিমো এইটা তো স্বপ্নেও ভাবু নাই মুই। কথা বলছিলেন সত্তরোর্ধ রফিজা বেওয়ার (৭২)। ভিক্ষা করে কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে জীবন কাটছে রফিজার। কোনো একজনের কাছে খবর পেয়ে ‘মেহমান খানায়’ এসেছেন তিনি। একই কথা জানালেন সদর উপজেলার রহিমানপুর গ্রামের আরেক আশি উর্দ্ধ বয়সের রহমত আলী। তিনি বলেন, খাবার পাই না। এই তাহানে না খায় থাকিবা হচিল। আর কম বেশি সারা সপ্তাহ না খাইলেও শুক্রবার মেহমান খানাত আসিয়া চাইটা ভাত ভালো তরকারি দেহেনে পেট ভয়িা খাবা পারি। যেইলা লোক হামার মতো গরীব লোকলাক খিলাচে আল্লাহ ওইলার ভালো করিবে।
খুব অল্প সময়ে ব্যাপক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা পেয়েছে এ মেহমানখানা। এ আয়োজন সম্পর্কে সাংবাদিক হারুন অর রশিদ জানান, প্রায় আড়াই মাস আগের কথা। শুক্রবার দুপুরে এক ভিক্ষুক এসে আমার কাছে খাবার চেয়ে বসেন। পাঁচজনের বাড়িতে খাবার চাওয়ার পরও তাকে কেউ খাবার দিতে রাজি হয়নি বলে জানান তিনি। সেদিন মনস্থির করেছিলাম সপ্তাহে অন্তত একবার এমন নিরন্ন মানুষের জন্য একবেলা খাবার আয়োজন করার। স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে পরামর্শ করে কাজে নেমে পড়ি।
তিনি আরও জানান, ফেসবুকে ‘হতভাগা সেন্টার’ নাম দিয়ে নিরন্ন মানুষদের খাবারের আয়োজন করার ঘোষণা দেই। প্রথম শুক্রবার বাজারে আসা ভিক্ষুক, মানসিক ভারসাম্যহীন ও নিন্ম আয়ের মানুষকে একবেলা খাওয়ার জন্য দাওয়াত দিই। প্রথম সপ্তাহে ১১৫ জন এসেছিলেন। এরপর এটার নাম পরিবর্তন করে ‘মেহমান খানা’ রাখা হয়। আজ শুক্রবারও প্রায় ২৫০ জন দরিদ্র, দুস্থ, অসহায় ও নিরন্ন মানুষের খাবারের আয়োজন হয়েছে মেহমান খানায়।
হারুন অর রশিদ জানান, ব্যক্তিগত ব্যয়ে গত ৮ সপ্তাহ ‘মেহমান খানা’ পরিচালনা করেছি। ইতোমধ্যে অনেকেই সহযোগিতা করার ইচ্ছা পোষণ করেছেন এবং অনেকে সহযোগিতা করেছেন।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি রমজান আলী বলেন, সপ্তাহে ২০০ মানুষকে বিনামূল্যে খাওয়ানোর উদ্যোগ সাহসের। ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগটি চালু রাখার জন্য সমাজের বৃত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। এ উদ্যোগ অব্যাহত থাকলে দরিদ্র মানুষের খাবার কষ্ট, খাবারের জন্য অপকর্ম ও অন্যায় কাজ কমে যাবে বলেও বিশ্বাস করেন তিনি।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম সুজন জানান, সপ্তাহে এত পরিমাণে দরিদ্র মানুষকে খাওয়ানো সত্যিই প্রসংশার ও সাহসের কাজ। খুব ভালো উদ্যোগ এটা। শুনেছি ও দেখেছি। যতটুকু সম্ভব নিজেও সহযোগিতা করবো আর অন্যদেরও বলবো এমন ভালো কাজের সাথে শরিক হতে। মহান আল্লাহ তাআলা এই কাজে বরকত দান করুন। সমাজের সকল সামর্থ্যবান ও বিত্তশালীদের এমন ভালো কাজে এগিয়ে আসার আহবান জানান এ রাজনীতিবিদ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat