×
ব্রেকিং নিউজ :
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নজরুল ইসলাম চৌধুরী প্রতিদিন ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় গৌতম বুদ্ধ প্রচার করেছেন অহিংসার বাণী : প্রধানমন্ত্রী সকলের সহযোগিতায় এডিস মশার বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা হবে : মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের শক্তিতে বিশ্বাসী : ডেপুটি স্পিকার স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় অভিনিবেশ ও কর্মস্পৃহা সভা আগামীকাল রাইসি’র মৃত্যুতে বাংলাদেশে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক আগামীকাল শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা চালের উৎপাদন বেড়েছে চার গুণেরও বেশি : কৃষিমন্ত্রী বিশ্বকাপের আগে শেষ প্রস্তুতি সিরিজে মুখোমুখি পাকিস্তান ও ইংল্যান্ড
  • প্রকাশিত : ২০১৮-০৪-২৬
  • ৮৪৮ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিনিধি:-  বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জনে প্রতি বছরই আবেদন পড়ে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। সুনির্দিষ্ট সংখ্যা না জানালেও তিনি বলেন, এই পরিমাণটা ‘অনেক’। বেশিরভাগ আবেদনই ভারত ও হংকং থেকে আসে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জন করতে চাইলে তাকে নিদিষ্ট নিয়মে আবেদন করতে হবে। ওই আবেদন যাচাই বাছাই করেই রাষ্ট্র এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। সম্প্রতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান তার পাসপোর্ট যুক্তরাজ্যেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে। তারেক রহমান ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে যুক্তরাজ্যে যান। কথা ছিল চিকিৎসা শেষে ফিরে আসবেন তিনি। কিন্তু কথা রাখেননি। আবার ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তারেক রহমান, তার স্ত্রী জোবাইদা রহমান এবং মেয়ে জাইমা রহমানের পাসপোর্টেও মেয়াদ শেষ হলেও তারা নবায়নের আবেদন করেননি। আর ২০০৪ সালের ২ জুলাই তারা পাসপোর্ট জমা দেন যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। গত ২১ এপ্রিল যুক্তরাজ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান, তারেক রহমান বাংলাদেশের পাসপোর্ট বর্জন করেছেন। দুদিন পর বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব দাবি করেন, দেন এই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তারেক রহমান পাসপোর্ট ফিরিয়ে দিলে তা প্রদর্শনেরও চ্যালেঞ্জ দেন তিনি। তবে ২৩ এপ্রিল দেশে ফিরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সব নথি প্রদর্শন করেন। জানান, ২০১৪ সালের ২ জুন এই পাসপোর্ট যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তারেক রহমান জমা দিয়েছেন আর তা পরে সে দেশের স্বরাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশ হাইকমিশনে ফেরত পাঠিয়েছে। আগে অস্বীকার করলেও এর পরদিন বিএনপি স্বীকার করে নেয় যে তারেক রহমান পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন। তবে এটা জমা দেয়া হয়েছে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য। আর পাসপোর্ট জমা দেয়ায় তারেক রহমানের নাগরিকত্বের কোনো সমস্যা হয়নি। তারেক রহমানের পাসপোর্ট হস্তান্তরের পর নাগরিকত্ব বিতর্ক তবে যখন সাংবাদিকদের তারেক রহমানের বাংলাদেশি পাসপোর্ট ফেরত দেয়ার কথা জানান, তখন তার একটি বক্তব্যকে ঘিরে বিতর্ক উঠে। পাসপোর্ট হস্তান্তর করার অর্থ নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়া কি না, একজন গণমাধ্যমকর্মীর এমন প্রশ্নে সেদিন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে আমি এটাই মনে করব। বিদেশে আপনার পরিচয়- আপনার পাসপোর্ট। সেই পাসপোর্টটিই যখন আপনি ফিরিয়ে দিচ্ছেন, তার অর্থ আপনি নাগরিকত্ব ক্লেইম করছেন না... আপনার কাছে একটাই পরিচয়পত্র ছিল, আপনি তা হস্তান্তর করে দিয়েছেন, এটা কী বোঝায়?’।
তারেক রহমান বাংলাদেশের পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেয়ার পর তার নাগরিকত্ব নিয়ে বিতর্ক ওঠেছে।
আর এই বক্তব্য দেয়ার পরদিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘তারেক রহমান তার এই প্রিয় দেশের নাগরিক ছিলেন, আছেন থাকবেন। তার (তারেক) নাগরিকত্ব বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম অদ্ভুত, যুক্তিহীন ও বেআইনি।’ এরপর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমার ক্লেইমের মূল বিষয় নাগরিকত্ব ছিল না, ছিল পাসপোর্ট ফেরত দেয়া। কিন্তু বিএনপির নেতার কথাতেই এখন প্রমাণ হচ্ছে যে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। তাই নাগরিকত্বের কথাটি আমি এখন আরো জোরালোভাবে দাবি করব।’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, পাসপোর্টের সাথে নাগরিকত্ব বর্জনের কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই। বিদেশে বসে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জন করতে হলে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে গিয়ে একটি ফরম, আবেদনপত্র জমা দিয়ে সাথে নির্দিষ্ট অংকের ফি জমা দিতে হয়। তারপর বাংলাদেশ এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে এবং প্রয়োজনে সার্টিফিকেট ইস্যু করে সত্যায়িত করবে যে উনার আবেদনের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব বাতিল করা হলো। আবার অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলেই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব চলে যায় না। কারণ, বাংলাদেশ দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকার করে। অর্থাৎ একই সঙ্গে অন্য কোনো দেশ এবং বাংলাদেশের নাগরিক থাকা যায়। তবে দ্বৈত নাগরিকরা দেশে কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। আবার কেউ নিজে আবেদন করে নাগরিকত্ব বর্জন না করলে জন্মসূত্রে প্রাপ্ত নাগরিকত্ব বাতিলের কোনো পদ্ধতি বাংলাদেশে নেই। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দোসর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া জামায়াত নেতা গোলাম আযমের নাগরিকত্ব বাতিল করে দেয়া আদেশ বিএনপি সরকারের আমলে উচ্চ আদালতে খারিজ হয়েছে। মির্জা ফখরুল এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে আক্রমণ করে বলেন, ‘কী কী কারণে একজন নাগরিক জন্মসূত্রে প্রাপ্ত নাগরিকত্ব হারাতে পারেন এটাও যিনি জানেন না, তেমন একজন ব্যক্তির শুধু এ ধরনের অনির্বাচিত সরকারের মন্ত্রী থাকা সম্ভব এবং তা জাতির জন্য লজ্জাজনক।’ অবশ্য বিএনপি নেতার এই বক্তব্যের পর তারেক রহমান জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক কি না, সে প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগ নেতা খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। মির্জা ফখরুলকে উদ্দেশ্য করে তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘তারেকের জন্ম করাচি (পাকিস্তানের একটি শহর)। জন্ম নিয়েও চোরামি।’ খালিদ লিখেন, ‘নিজের নেতার জন্ম কোথায়, কবে জন্ম নিয়েছেন- মির্জা ফখরুল তা জানেন না। অথবা জেনেশুনে মিথ্যাচার করছেন। যদি নিজের নেতার জন্ম সম্পর্কে তিনি না জানেন তাহলে ইতিহাস জেনে মির্জা ফখরুলের উচিত ‘তারেক জন্মসূত্রে বাংলাদেশি’- এমন বক্তব্য প্রত্যাহার করা। আর মিথ্যাচার করে থাকলে জাতির সঙ্গে প্রতারণা করার দায়ে তার প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত।’ নাগরিকত্ব বর্জনের পদ্ধতি কী? জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব (বহিরাগমন-৩ এবং নিরাপত্তা-৪) সনজীদা শরমিন বলেন, বাংলাদেশ কোন নাগরিক যদি নাগরিকত্ব বর্জন করতে চায় তাহলে দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। ওই আবেদন যাচাই বাছাই করে নাগরিকত্ব বাতিল করে চিঠি দিয়ে ওই ব্যক্তিকে জানিয়ে দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি বাংলাদেশে আসতে চাইলে তাকে বাংলাদেশের ভিসা নিয়ে আসতে হবে।’  
তারেক রহমানের জমা দেয়া পাসপোর্টের কপি দেখাচ্ছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
তারেক রহমানের নাগরিকত্ব নিয়ে বিতর্কেও মধ্যে এটা নিশ্চিত যে, তিনি এখনও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জনের জন্য আবেদন লন্ডন হাইকমিশনে জমা দেননি। নাগরিকত্ব বাতিলের এই আবেদন কি কখনও পেয়েছেন?-এমন প্রশ্নে সনজীদা শরমিন বলেন, ‘প্রতি বছর হংকং এবং ভারত থেকে এ ধরনের অনেক আবেদন আমরা পেয়ে থাকি। অনেকে ভারতে বিয়ে করে সেখানকার নাগরিকত্ব নিতে চায়।’ ‘সেক্ষেত্রে তাকে বাংলাদেশি নাগরিকত্ব বর্জন করেই ভারতীয় নাগরিকত্ব নিতে হয়। হংকং থেকেও এমন অনেক আবেদন পাওয়া যায়। তবে কী পরিমাণ ব্যক্তি নাগরিকত্ব বর্জন করেছে তার সঠিক হিসাব চাইলে সময় লাগবে।’ অন্য দেশের রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকলেও নাগরিকত্ব থাকে আবার রাজনৈতিক আশ্রয় আর বিদেশের নাগরিকত্বও এক জিনিস নয়। কেউ অন্য দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকলেও বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী তার নাগরিকত্ব বাতিল হয় না। যুক্তরাজ্যে সরাসরি অন্য দেশের কাউকে নাগরিকত্ব দেয় না। প্রথমে দেয়া হয় আইএলআর বা ইন্ডেফিনিট লিভ টু রিমেইন। এর মানে হচ্ছে অনির্দিষ্টকালের জন্য যুক্তরাজ্যে থাকার অধিকার। তারপর কয়েক বছর থাকার পরে নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়। কেউ যদি যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব না নিয়ে সেখানে আইএলআর নিয়েও সারাজীবন থাকতে পারবেন। বড় কোনো অপরাধ না করলে আইএলআর বাতিল হওয়ার নজির নেই। রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকলে যুক্তরাজ্য থেকে ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ নিয়ে অন্য দেশে যাওয়াও যায়। তবে নিজের দেশে যাওয়া নিষেধ। আর পাসপোর্ট ব্রিটিশ হলে তিনি সব দেশেই যেতে পারবেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat