×
ব্রেকিং নিউজ :
হবিগঞ্জে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব সংস্কার, গণহত্যার বিচার ও সুষ্ঠু নির্বাচনে তরুণ নেতৃত্ব অপরিহার্য : রাশেদ খাঁন ইলিশ সংরক্ষণে চাঁদপুরে কোস্ট গার্ডের জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম বগুড়ায় প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব পটুয়াখালীতে এনসিপির কার্যালয় উদ্বোধন দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন উৎসবে কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকের ঢল বঙ্গোপসাগর অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি রাত ৯টায় উপকূল অতিক্রম করতে পারে গবেষণালব্ধ বই যুগের আলোকবর্তিকা : ধর্ম উপদেষ্টা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব বিমানবন্দরে দুর্ব্যবহার এনসিপির নেতাকর্মীদের, সংবাদ সম্মেলন বর্জন সাংবাদিকদের
  • প্রকাশিত : ২০২৩-০১-১৬
  • ৭২১ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

সাগরে মাছ ধরার জাল উৎপাদনে পথিকৃৎ ব্যবসায়ী কুমিল্লার মফিজ উল্লাহ। সত্তর ও আশির দশকে যখন সাগরে মাছ ধরার জন্য বিদেশি জালের ছড়াছড়ি, তখন তিনি দেশেই বাণিজ্যিকভাবে মানসম্পন্ন জাল উৎপাদন শুরু করেন। তবে তাঁর ব্যবসায়িক জীবনের গল্পটা কিন্তু ভিন্ন। জীবনের পাশাপাশি ব্যবসায়েও তাঁকে কঠোর সংগ্রাম করতে হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছেন কুমিল্লার এ ব্যবসায়ী।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় একেবারে নিভৃত এক গ্রাম নরোত্তমপুরে ১৯৩৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন মফিজ উল্লাহ। পড়াশোনায় খুব বেশি অগ্রসর হতে পারেননি। সংসার চালাতে ষাটের দশকে তিনি হাটে হাটে কলা বিক্রি করেছেন। এতে যে লাভ হয়, তার একটা অংশ সঞ্চয় করেন এবং একসময় বেগমগঞ্জ বাজারে তিন হাজার টাকায় ঢাকা স্টোর নামে একটি মুদিদোকান খোলেন। এরই মধ্যে শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ। তখন তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের দোকানে বসিয়ে খাবার খাওয়াতেন। এ জন্য ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাঁর স্বপ্ন-সাধের মুদিদোকান ঢাকা স্টোর পুড়িয়ে দেয়। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েন মফিজ উল্লাহ।
মুক্তিযুদ্ধের পর কাজের সন্ধানে রাজধানীর অদূরে টঙ্গীতে চলে আসেন। কিন্তু বছরখানেক সেখানে থেকে অনেক চেষ্টা করেন। কিন্তু তেমন এগোতে পারেননি। তাই চলে আসেন কুমিল্লায় এবং সেখানেই থিতু হন। ১৯৭২ সালে এ জেলা শহরের চকবাজার এলাকায় স্বল্প পুঁজিতে আলোতিতাস নামে একটি বিস্কুটের কারখানা দেন। এতে সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেন। ১৯৭৭ সালে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কুমিল্লা বিসিকে একটি প্লট কিনে প্লাস্টিকের রশি বানানোর কারখানা স্থাপন করেন। এবার আরও সফলতা পান তিনি। এক বছরের মাথায় ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ফরিদ গ্রুপ। বছর দশেক পর ১৯৮৭ সালে জাল বানানোর জন্য বিসিকেই আলাদা প্লটে আরেকটি কারখানা গড়ে তোলেন। এরই ধারাবাহিকতায় চার দশকের বেশি সময় ধরে সাগরে মাছ ধরার জাল-রশি উৎপাদন ও সরবরাহে দেশের বাজারে এক বিশ্বস্ত নাম হয়ে উঠেছে ফরিদ গ্রুপ।
১৯৯৩ সালে মফিজ উল্লাহ মারা যান। তবে তাঁর পাঁচ ছেলে শক্ত হাতেই বাবার ব্যবসার হাল ধরেন। ব্যবসা আরও বাড়ান। এখন জাল-রশির পাশাপাশি প্লাস্টিকের পাটি, কার্পেটসহ বিভিন্ন ধরনের বাহারি পণ্য তৈরির মোট ছয়টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে ফরিদ গ্রুপের মালিকানায়।
শুধু দেশে নয়, দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে ফরিদ গ্রুপের তৈরি মাছ ধরার জাল-রশি। প্রধান রপ্তানি বাজার প্রতিবেশী ভারত। তবে শ্রীলঙ্কা, তুরস্ক এবং আফ্রিকার দেশ মালিতেও যায় তাদের জাল ও রশি।
কুমিল্লার বিসিকে ফরিদ গ্রুপের এ দুটি কারখানা সরেজমিনে দেখা গেছে, একদম ছিমছাম পরিবেশ। মেশিনের খুব বেশি শব্দ নেই। কারখানায় চীন, জাপান ও জার্মানি থেকে আনা অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে হাতের স্পর্শ ছাড়াই জাল বানানো হচ্ছে। মেশিনে একদিকে সুতা ঢুকছে, অন্যদিকে জাল বের হয়ে আসছে। অবশ্য জালের আয়তন ও জালের ভেতরের ফাঁকা কতটা হবে, তা আগে থেকে ঠিক করে দিতে হয়। প্রতিটি মেশিনের পাশে অ্যাপ্রান পরা একজন করে কর্মী দাঁড়িয়ে। তিনি ঠিকমতো জাল বোনা হচ্ছে কি না, তা তদারক করেন। প্রয়োজন মতো সুইচ টেপেন। কারখানা দুটিকে বেশ পরিবেশবান্ধব। তাপমাত্রা সহনীয় রাখতে কারখানার ছাদে বিশেষ ধরনের প্রলেপ বা বেষ্টনী দেওয়া আছে। কারখানার আরেক পাশে চলছে জাল ও রশি প্যাকেটজাত করার কাজ। জাল-রশির চালান প্যাকেটজাত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা পরিবেশকদের কাছে চলে যায়।
ফরিদ গ্রুপের কর্মকর্তারা জানান, বাজারের চাহিদা অনুযায়ী তাঁদের দুটি কারখানায় ৪০ ধরনের নেট ও রশি তৈরি হয়। প্রতিদিন ১২ টন জাল বানানোর সক্ষমতা আছে জালের কারখানাটির। আর দৈনিক রশি বানানোর সক্ষমতা প্রায় ১৫ টন। মাছ ধরার জাল ও রশি বানানোর এত সক্ষমতা দেশে আর কোনো কোম্পানির নেই বলে তাঁরা দাবি করেন।
ফরিদ গ্রুপের পরিচালক জহিরুল হক বলেন, আমরা মানসম্পন্ন জাল ও রশি তৈরি করি। তাই গ্রাহকেরা আমাদের পণ্যের প্রতি আস্থা রাখছেন। আমরা পণ্যের মান ও কর্মপরিবেশ নিয়ে কোনো ছাড় দিই না। জহিরুল হক জানান,প্রতিবছর জালের চাহিদা একই রকম থাকে না। যে বছর বেশি মাছ ধরা পড়ে, সেবার চাহিদা বাড়ে। কারণ, জালে বেশি মাছ আটকা পড়লে প্রাণ বাঁচাতে জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে যেতে চায়। এতে জালের ক্ষতি হয় এবং স্থায়িত্ব কমে।
উদ্যোক্তার নাম মফিজ উল্লাহ। তাহলে ফরিদ গ্রুপ হলো কীভাবে? অনেকেই প্রশ্ন করেন, আলাপচারিতায় জানা গেছে, পরিবারের কারও নাম ফরিদ নয়। ১৯৭৮ সালে যাঁর কাছ থেকে প্লটটি কেনা হয়েছে, তাঁর নাম ফরিদ। তিনি প্লটটি বিক্রির সময়ে মফিজ উল্লাহর কাছে অনুরোধ করেছিলেন যে তিনি অর্থের অভাবে সফল হতে পারেননি। কিন্তু অনেক স্বপ্ন নিয়ে উদ্যোক্তা হতে চেয়েছিলেন। তাই কারখানার নামের সঙ্গে যেন ফরিদ শব্দটি থাকে। তাঁর অনুরোধটি রাখলেন মফিজ উল্লাহ। গ্রুপের নাম দিলেন ফরিদ গ্রুপ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat