নিজস্ব প্রতিনিধি:- দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি কবে হবে এ নিয়ে দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেশব গোখলের বাংলাদেশে সফরেও কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা পাওয়া গেল না। আগের বহুবারের মতোই তিনি ‘শিগগির চুক্তি সইয়ের চেষ্টা’ চলার আশ্বাসের কথাই বললেন।
ভারতীয় সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেশ কিছু অগ্রগতি হলেও তিস্তা চুক্তি অমীমাংসিত রয়ে গেছে। এটা সমাধানে আমরা যত দ্রুত সম্ভব চুক্তিটি সইয়ের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’
সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক শেষে এ সব কথা বলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেশব গোখলে। এই বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে ছয়টি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়। কথা হয় রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়েও।
ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কে আপাতত সবচেয়ে বড় কাঁটা হয়ে রয়েছে তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যা। ২০১১ সালেই তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরে চুক্তির খসড়াও প্রস্তুত ছিল। কিন্তু শেষ পর্যায়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আপত্তিতে আটকে যায় এই চুক্তি।
মমতার দাবি, ভারত বাংলাদেশকে যে পরিমাণ পানি দেবে বলছে, সে পরিমাণ পানি পশ্চিমবঙ্গের নদীতেই আসে না। আরও উজানে গজলডোবা এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করে পানি প্রত্যাহারই এর কারণ।
গত বছরের ৭ থেকে ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে ৩৫টি বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হলেও প্রত্যাশিত তিস্তা চুক্তি হয়নি। তবে সফরের দ্বিতীয় দিন ৮ এপ্রিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বর্তমান সরকারের আমলেই তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি করার অঙ্গীকার করেন।
গত ১১ মার্চ রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ভারত সফরেও তিস্তা চুক্তির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সেদিন আবদুল হামিদকে মোদি জানান, এ বিষয়ে মমতা বন্দোপাধ্যায়কে রাজি করানোর চেষ্টা চলছে।
রবিবার ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফরেও এই চুক্তির বিষয়টি নিয়ে কথা হবে, সেটি আগেই জানা গিয়েছিল। তবে তিনিও সুনির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা বর্ণনা করে আশ্বাসের বৃত্তেই থাকলেন।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক বলেন, ‘আমরা তিস্তা চুক্তির বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব জানিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব চুক্তিটি সইয়ের জন্য তারা কাজ করছেন।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহায়তা দেবে ভারত
বৈঠকে গুরুত্ব পায় মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের প্রত্যাবাসন ইস্যুতেও। গত আগস্টের রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযানের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। এই সংখ্যাটা এখন ১১ লাখ ছাড়িয়েছে। আর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দেশটির সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক এবং একটি ফিজিক্যাল অ্যারাঞ্জমেন্ট চুক্তিও করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু নানা অযুহাতে চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গাদেরকে ফিরিয়ে নিচ্ছে না মিয়ানমার।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরুর পর বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সহযোগিতা পায়নি। তবে এখন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে তাদেরকে পাশে চায় বাংলাদেশ।
ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব জানান, এ বিষয়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতা দেবে তার দেশ।
গোখলে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন এ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে ভারত।’
‘বর্ষা মৌসুমে রোহিঙ্গাদের চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত এই জনগণের সহায়তায় আমরা দ্বিতীয় দফায় ত্রাণ সামগ্রী পাঠাব। তাছাড়া রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের জন্য মাঠে পর্যায়ে হাসপাতাল চালু করবে ভারত।’
এ সময় বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জনে শুভেচ্ছা জানান গোখলে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতাপূর্ণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা কথা বলেছি। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। এবং ভারত যেভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে তাতে আমরা অত্যন্ত খুশি।’
ছয় বিষয়ে সমঝোতা
বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে ছয়টি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এর মধ্যে রয়েছে ভারত থেকে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য পাইপলাইন স্থাপন, বাংলাদেশ বেতারের প্রসারে ভারতীর সহযোগিতা, রংপুর সিটি করপোরেশনে সড়ক নির্মাণ, ৫০৯টি স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উর্দু চেয়ার স্থাপন আর দুই দেশের আণবিক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা।