×
ব্রেকিং নিউজ :
হবিগঞ্জে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব সংস্কার, গণহত্যার বিচার ও সুষ্ঠু নির্বাচনে তরুণ নেতৃত্ব অপরিহার্য : রাশেদ খাঁন ইলিশ সংরক্ষণে চাঁদপুরে কোস্ট গার্ডের জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম বগুড়ায় প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব পটুয়াখালীতে এনসিপির কার্যালয় উদ্বোধন দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন উৎসবে কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকের ঢল বঙ্গোপসাগর অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি রাত ৯টায় উপকূল অতিক্রম করতে পারে গবেষণালব্ধ বই যুগের আলোকবর্তিকা : ধর্ম উপদেষ্টা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব বিমানবন্দরে দুর্ব্যবহার এনসিপির নেতাকর্মীদের, সংবাদ সম্মেলন বর্জন সাংবাদিকদের
  • প্রকাশিত : ২০১৮-১০-১০
  • ৪৩৭ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক
শতাধিক বাংলাদেশি শ্রমিক শূন্য হাতে দেশে ফিরছেন
প্রবাস ডেক্স:-গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে সৌদি আরবের বিভিন্ন এলাকায় বিদেশি শ্রমিকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অজুহাতে ধরপাকড় চলছে। আর এ সময়ে সৌদি পুলিশ ঢালাওভাবে বাংলাদেশিদের আটক করছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। পুলিশের অভিযানে সৌদিতে আটককৃত পুরুষ শ্রমিকদের জোর করে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফেরার সময় তাদের কোনো মালামাল এমনকি আয়ের টাকা-পয়সাও দেশে আনতে দেওয়া হচ্ছে না। শ্রমিকেরা শূন্য হাতে দেশে ফিরছেন। গত রবিবার এমনই শূন্য হাতে দেশে ফিরেছেন ১১০ জন শ্রমিক।
সৌদি থেকে দেশে শ্রমিকরা জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বর মাস থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময়ে প্রায় ১ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিককে আটক করেছে সৌদি পুলিশ। আকামা (কাজের অনুমতি) ও সৌদি সরকারকে দেওয়া ট্যাক্সের কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও তাদের আটক করা হয়েছে। অথচ তারা প্রতিবছর আকামা ও ট্যাক্স বাবদ দেশটির সরকারকে ১৪ হাজার রিয়েল দিয়েছেন। অন্যদিকে ছিল কফিলের (মালিক, যার অধীনে থাকে) জ্বালাতন। কফিলের অধীনে কাজ করতে গিয়ে তাদের প্রতি মাসে ৩০০ থেকে শুরু করে ৫০০ রিয়েল পর্যন্ত দিতে হয়েছে শ্রমিকদের। এত কিছু দেওয়ার পরেও তাদের ধরে ধরে ফেরত পাঠাচ্ছে সৌদি সরকার।
তাদের অভিযোগ, কোনো প্রয়োজনে ঘর বা প্রতিষ্ঠানের বাইরে বের হলেই রাস্তা থেকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তাদের নেওয়া হচ্ছে সফর জেলে (অস্থায়ী কারাগার)। আটকের সময় কোনো কিছু শুনছে না তারা। কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়িতে তোলা হয়। পরে তাদের কিছুদিন জেলে রেখে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাদের বাসাবাড়ি বা কোম্পানির মেস থেকে আটক করা হয়েছে তাদের কোনো কিছুই সঙ্গে নিয়ে যেতে দেওয়া হয়নি। অনেকে শুধু পরনের পোশাক আর পায়ে পরে থাকা স্যান্ডেল নিয়ে দেশে ফিরেছেন।
তবে দেশে ফেরাদের অধিকাংশ পুরুষই দেশটিতে এক যুগের বেশি সময় ধরে ছিলেন। কেউ দোকানে, কোম্পানিতে, ভবন নির্মাণ শ্রমিক, ঠিকাদারি, অন্যের গাড়ি চালানো এমনকি অনেকে ব্যবসা করতেন। তাদের বেশিরভাগেরই আকামা ছিল।
দেড় বছর আগে সাড়ে ৫ লাখ টাকা খরচ করে দালালের মাধ্যমে সৌদি যান বগুড়া আদমদীঘি উপজেলার আবু বায়েজিদ। সেখানে গিয়ে দেড় বছর কাজও করেন বায়েজিদ। সৌদি আরব যাওয়ার অর্ধেক টাকা তার উঠেও এসেছে। কিন্তু এরই মধ্যে সব এলোমেলো হয়ে গেল। একদিন দুপুরে খাবার কেনার জন্য রাস্তায় বের হলে সৌদি পুলিশ তাকে আটক করে। রবিবার তিনি দেশে ফিরেছেন।
বায়েজিদ জানান, সৌদি যাওয়ার সময় তিনি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ১ লাখ, ঋণ করে ১ লাখ এবং তার ব্যবসার জন্য দোকান বিক্রি করে বাকি টাকা সংগ্রহ করেছিলেন। জমি-জমা বলতে তার কিছুই নেই। দেশে ফিরেছেন শূন্য হাতে। পরনে একটি শার্ট, প্যান্ট আর স্যান্ডেল ছাড়া কিছু নিতে পারেননি। গ্রামে গিয়ে কী করবেন এই ভাবনা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ছেলে-মেয়েদেরকে কী বলবেন। কোনো প্রশ্নের উত্তর তার জানা নেই। হতাশা আর দুশ্চিন্তামাখা মলিন মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হতে চায় না। তিনি বলেন, ‘সব শ্যাষ হয়া গেল। দেশে ফিরি কী করবো কবার পাচ্চি না। দুডা ছাওয়াক কী করি খাওয়ামো মাথা কাজ করিচ্ছে না।’ শুধু বায়েজীদ নয়, তার মতোই বহু শ্রমিক শূন্য হাতে দেশে ফিরেছেন। তেমনই একজন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার দেলোয়ার হোসেন।
দেলোয়ার ২০০০ সালে সৌদি আরব যাওয়ার পর কিছুদিন তিনি একটি কোম্পানির অধীনে কাজ করেন। পরে এক সময় ভবন নির্মাণ শ্রমিক সরবরাহের ঠিকাদার হিসেবে ব্যবসা শুরু করেন। ভালোই চলছিল তার সবকিছু। কিন্তু গত মাসে তিনি পুলিশের হাতে আটক হন। সফর জেল থেকে ফেরার আগে তার কফিল তাকে কিছু কাপড় ও দুটি লাগেজে কিছু জিনিসপত্র দেন। কিন্তু সৌদি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাকে কিছুই নিতে দেয়নি।
মেহেরপুর সদন উপজেলার হাফিজ রহমান। তিনি ২০০৭ সালে সৌদি যাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করেছেন। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ থেকে ঢালাওভাবে আটকের খবরে শঙ্কিত তিনি। নিরাপত্তার কথা ভেবে তিনি নিজেই পুলিশের কাছে ধরা দিয়ে দেশে ফিরেছেন। হাফিজ বলেন, ‘জান নিয়া দেশে ফিরছি এটাই বড় কথা। অনেককে পুলিশ আটকের পর মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। যদি আবার কোনো মামলায় সাজা হয়ে যায়, এ কারণে পরিবারের কথা ভেবে আগেই চলে আসলাম।’
ফেরত আসা ব্যক্তিদের অভিযোগ, সৌদিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে তারা আটকের বিষয়ে জানালেও কর্মকর্তারা ছিলেন নীরব। তারা কোনো ধরনের প্রতিবাদ করেননি। এমনকি তাদের ছাড়িয়ে নেওয়ারও কোনো ব্যবস্থা করেননি। তবে কারো কারো জন্য দেশটির কফিলরা টাকার বিনিময়ে সুপারিশ করেছিলেন। তাদের কয়েকজন ছাড়াও পান। এর আগে গত ২৬ অক্টোবর ৮০ জন, ৩ অক্টোবর ১৪৪ জন, ৫ অক্টোবর ১৫০ জন ও ১৭০ জন পুরুষ শ্রমিক শূন্য হাতে দেশে ফিরেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat