×
ব্রেকিং নিউজ :
হবিগঞ্জে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব সংস্কার, গণহত্যার বিচার ও সুষ্ঠু নির্বাচনে তরুণ নেতৃত্ব অপরিহার্য : রাশেদ খাঁন ইলিশ সংরক্ষণে চাঁদপুরে কোস্ট গার্ডের জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম বগুড়ায় প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব পটুয়াখালীতে এনসিপির কার্যালয় উদ্বোধন দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন উৎসবে কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকের ঢল বঙ্গোপসাগর অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি রাত ৯টায় উপকূল অতিক্রম করতে পারে গবেষণালব্ধ বই যুগের আলোকবর্তিকা : ধর্ম উপদেষ্টা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব বিমানবন্দরে দুর্ব্যবহার এনসিপির নেতাকর্মীদের, সংবাদ সম্মেলন বর্জন সাংবাদিকদের
  • প্রকাশিত : ২০১৮-০৭-০৭
  • ৫৮৫ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক
মনের উত্পাত আর জ্বলুনি
‘পাগলা মলম, পাগলা মলম, পাগলা মলম। আমাদের মলমটা ব্যবহার করবেন আপনার চর্মরোগে। মাথার খুলি থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত আপনার চামড়ার ওপর যেসব রোগ হয় সেগুলো চর্মরোগ আর ইংলিশে বলে স্কিন ডিজিজ। যে কোনো চর্মরোগে মলমটা ব্যবহার করবেন, এটা আশ্চর্য ধরনের কাজ দেবে। চর্মরোগ বলতে আপনি যা কিছু বোঝেন, যেমন- খুজলি, দাউদ, বিখাউজ, একজিমা, চুলকানি, বিচি-পাচড়া, গোটা-গাটা। রানে-কানে, আঙুলের চিপায়-চাপায় সারা শরীরে খাউজানি, চুলকানি, ঘা গোটা গাটায় ভরে গেছে। অসহ্য চুলকানি হয়, মরিচের মতো জ্বলে। রাতে শোবার টাইমে মাত্র দুইটা দিন মলমের কৌটা দিয়ে ভালো কইরা চুলকায়ে লাগায়ে দিবেন পাগলা মলম। খাউজানি, চুলকানি, বিচি পাচড়া, ঘা চুলকানি তো দূরের কথা, একটি ঘামাচির বিচি পর্যন্ত থাকতে পারে না এই পাগলা মলম ব্যবহারে। প্রতিটি মলম মাত্র দশ টাকা, দশ টাকা, দশ টাকা। হিপু কেমিক্যাল কোম্পানির চর্মরোগের মহৌষুধ পাগলা মলম।’ এভাবেই মাইক বাজিয়ে ঢাকা শহরের বিভিন্ন ফুটপাতে বিক্রি করা হয় পাগলা মলম।
 
চুলকানি! শব্দটা শুনতে একটু খারাপ বটে। গুগল ডিকশনারি বলছে, চুলকানির সমার্থক শব্দ অনেক। ইংরেজিতে itch, বাংলায় রয়েছে এর বিচিত্র প্রতিশব্দ—পাঁচড়া, খুজলি, খোস, কণ্ডূ, বিচর্চিকা, চুলকনা, জ্বালাতন, উত্পাত ইত্যাদি। ইংরেজি ‘ইচ’-এর প্রতিটি প্রতিশব্দই চুলকানির স্বরূপ তুলে ধরে। শব্দটা শুনতে যেমনই লাগুক, ‘চুলকানি’ আসলে অত্যন্ত বিরক্তিকর একটা ব্যাধির নাম। কথায় আছে— কথায় আছে—‘করিয়া বিকৃত মুখ, চুলকাইতে বড় সুখ’। যখন চুলকায় তখন কিন্তু আরাম লাগে। কিন্তু চুলকানি শেষ হলে শুরু হয় আসল খেলা—জ্বলুনি। অনেক সময় মনে হয় যেন মরিচ-বাটা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। চুলকানি কী, এটা কেন হয়, এর উপসর্গ ও ফলাফল কী-এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা দরকার। এ ব্যাপারে ভালো চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা দরকার। তা না হলে এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ যন্ত্রণাভোগ করতে হতে পারে।
 
আমাদের দেশের মানুষের নানা ধরনের চুলকানির ব্যারাম আছে। যেগুলো ঠিক চিকিত্সাশাস্ত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। এসব বিচিত্র চুলকানি নিয়েই আজ আমরা আলোচনা করব।
 
আমাদের চুলকানি বা জ্বলুনি শুধু শরীরে নয়, মনেও। আর শুধু এক জায়গায় নয়, বহু জায়গায়। সব কিছুতেই জ্বলুনি। দরকার শুধু একটা ইস্যু! যত ইস্যু তত চুলকানি, যত চুলকানি তত আরাম। সেই আরামের পর অবশ্য জ্বলুনিও কম জ্বালায় না। কিন্তু এই চুলকানি আবার যত লোকের সামনে করা যায় ততই ভালো। যেমন ধরেন ফেসবুক! গুরুতর থেকে সামান্য যে কোন ঘটনায় কেউ যদি একটা কথাও বলে, তবে সেই কথার উপর ভিত্তি করে কারো না কারো চুলকানি উঠবেই। সেই চুলকানি সংক্রামক রোগের মতো ছড়িয়ে পড়বে মুহূর্তে। তারপর একই প্রসঙ্গ নিয়ে জেনে না জেনে, বুঝে না বুঝে প্যাঁচানো চলবেই। ফেসবুক ছাড়াও বাস্তব জীবনেও চুলকানির হাত থেকে আমাদের রেহাই নেই। কারো অবৈধ টাকা দেখলে চুলকায়, কারো গরিব লোকের জায়গাজমি দেখলে চুলকায়, কারো অন্যের ভালো কাজ দেখলে চুলকায়, কারো অন্য দেশের কথা শুনলে চুলকায়। কেউ মাথা চুলকায়, কেউ হাত চুলকায়, কেউ গাল চুলকায়, কেউ পিঠ চুলকায়। এই চুলকানি কমানোর জন্য আবার রাস্তাঘাটে, বাসে ট্রেনে মলমও বিক্রি করে কিছু লোক, যেটা শুরুতেই বলেছি। তাও চুলকানি কমে না আমাদের।
 
শরীরের চুলকানি মলম বা ঠিকঠাক ওষুধে দূর করা গেলেও মনের চুলকানি কোনোভাবেই দূর করা বা সারানো সম্ভব নয়। মনের চুলকানি দূর করার জন্য কোনো মলম বা ওষুধ আবিষ্কার হয়েছে কিনা সেটা জানা যায় না। এমনকি সবজান্তা ‘গুগল’ও এ ব্যাপারে সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারে না।
 
শরীরের চুলকানি পরিচ্ছন্নতা, আবহাওয়া বা স্পর্শজনিত কারণে হতে বা সংক্রমিত হতে পারে। তবে মনের চুলকানি হয় দহনে, কর্মহীনতায় এবং যন্ত্রণায়। নিজে কিছু করতে না পারার যন্ত্রণা বা অন্য কারো সাফল্য সইতে না পারার যন্ত্রণা অথবা শুধু-শুধুই আনমনে এই চুলকানি হতে পারে! যেমন একজন কোনো ভালো কাজ করছে, সবার প্রশংসা পাচ্ছে কিন্তু সঙ্গে কারো মনে চুলকানির বীজ বপন করছে। একজন হয়তো একটু ফিটফাট বা পরিপাটি হয়ে চলছে তা দেখে কারো মনে চুলকানি শুরু হয়ে গেল!
 
একটি সংগঠন ভালো কিছু করার উদ্দেশ্য নিয়ে গড়ে উঠে কিন্তু পদ-পদবি অথবা অন্যের কোনো ভালো কাজ করা দেখে শুরু হয় চুলকানি! আর অতি চুলকানিতে দল ভেঙেচুরে খণ্ড-বিখণ্ড হয়।
 
বহু আগে চুলকানি-সংক্রান্ত কৌতুক শুনেছিলাম। এক ভদ্রলোক স্টেশনে গেছেন ট্রেন ধরার জন্য। স্টেশনে পৌঁছানো মাত্র একটি লোক পেছন থেকে তাকে ডাকল, এই যে ভাই থামেন, একটু থামেন। লোকটি থামল। লোকটি পেছন থেকে আস্তে হেঁটে এসে তার সামনে দাঁড়াল এবং তার কাছে জানতে চাইল, কেমন আছেন? লোকটি জবাব দিল, ভালো আছি। তখন সে প্রশ্ন করল, ভাই কি কোথাও যাচ্ছেন? লোকটি জবাব দিল, হ্যাঁ যাচ্ছি। তারপর আবার জিজ্ঞেস করল, ভাই  কোথায় যাচ্ছেন? লোকটি বলল, আমি টাঙ্গাইল যাচ্ছি, আমার শ্বশুরবাড়ি। তারপর আবার জিজ্ঞেস করল, ভাই কি সকালে কিছু খাইছেন? ভদ্রলোক একটু বিরক্ত, তাই উনি কোনো জবাব দিলেন না। তখন আবার জিজ্ঞেস করল, ভাই কন না কিছু খাইছেন নাকি? তখন লোকটি বিরক্ত হয়ে বলে, খাইছি। এবার আবার প্রশ্ন করে, কি খাইছেন? ভাত না রুটি! তখন লোকটি খেপে গিয়ে বলল, এত প্যাঁচাল পাড়েন কেন? কি খাইছি না খাইছি আমার ব্যাপার, আপনার কি? প্রশ্নকারী লোকটি বলল, ভাই জানতে মন চাইছে তাই জিগাইলাম! সকাল থেইকা এই স্টেশনে একা বইসা রইছি! কোনো কাজ-কাম নাই তো, সময় কাটে না! তাই আপনারে একটু খাওজাইলাম আর কি!
 
পরিশেষে চুলকানি বিষয়ে একটি ছড়া:
 
চুলকানি রোগ কাকে বলে জানেন তা নিশ্চয়?
 
শুনেছি ঐ লেখেন যারা তাদের এ রোগ হয়!
 
কিছু মানুষ পরের ভালো দেখতে নাহি পারে,
 
বেছে বেছে তাদেরও এই চুলকানি রোগ ধরে!
 
আর কিছু লোক পাতি-আঁঁতেল ভান করে সব জানে,
 
স্বভাব দোষে চুলকে মরে তারাই তো সব স্থানে।
 
শরীরে যে চুলকানি হয় মলমে যায় সেরে,
 
মনে যাদের চুলকানি হয় তারাই জ্বলে মরে!
 
পরের ভালো দেখেই যদি হিংসা জাগে প্রাণে,
 
বনের বাঘে বাঁধবে বাসা এসে তোমার মনে।
 
তাই বলি সব হিংসা ছাড়, অহং কর দূর,
 
চুলকানি রোগ সেরে যাবে মন হবে ভরপুর।
 
আয়ারল্যান্ডে সাত বছরের চুলকানি অর্থাত্ সেভেন ইয়ার্স ইচ (7 Years Itch) নামে একটি কথা প্রচলিত আছে। তারা মনে করে, প্রতিটি বৈবাহিক সম্পর্কে বা প্রেমের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সাত বছর পর টানাপড়েন সৃষ্টি হয়, সম্পর্কটি কেমন যেন বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, ভালো না লাগার কারণগুলো মুখ্য হয়ে যায়, ওই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে যাবার প্রবণতা সৃষ্টি হয়। ওই ‘সেভেন ইয়ার্স ইচ’ সময়সীমা যদি কোনো জুটি অতিক্রম করতে পারে, তাহলে পরবর্তী সাত বছর তারা আবার একসঙ্গে কাটিয়ে দিতে পারে। কিন্তু সাত বছর পর আবার সেই চুলকানি ফিরে আসবে!
 
আমাদের ক্ষেত্রে অবশ্য সাত বছর, সাত মাস এমনকি সাত দিনও নয়, সাত মিনিট পর পরই নানা রকম চুলকানি ফিরে ফিরে আসে।
 
n লেখক : রম্যরচয়িতা

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat