কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত রাত থেকে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলায় কমপক্ষে নয়জন নিহত এবং অনেকেই আহত হয়েছেন। চলমান বন্দী বিনিময়ের মধ্যে কিয়েভ এবং মস্কোর মধ্যে এ হামলার ঘটনা ঘটল।
কিয়েভ থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
আঞ্চলিক সামরিক প্রশাসনের উপ-প্রধান সের্গি তিউরিন এক টেলিগ্রাম পোস্টে বলেছেন, রাশিয়ার রাতের হামলায় পশ্চিম খমেলনিটস্কি অঞ্চলে চারজন, কিয়েভ অঞ্চলে চারজন এবং দক্ষিণে মাইকোলাইভে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, গত রাতে, খমেলনিৎস্কি অঞ্চলে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। রাশিয়ার হামলায় বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। হামলায় চারজন নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছেন।
জরুরি পরিষেবাগুলো এক টেলিগ্রাম পোস্টে জানিয়েছে, ‘রাতের ভয়াবহ হামলায়’ কিয়েভ অঞ্চলে চারজন নিহত এবং তিন শিশুসহ ১৬ জন আহত হয়েছে।
জরুরি পরিষেবাগুলো জানিয়েছে, দক্ষিণ ইউক্রেনের মাইকোলাইভে একটি আবাসিক ভবনে ড্রোনের আঘাতে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মস্কোর দিকে ধেয়ে আসা এক ডজন ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে।
গত ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে মস্কোর পূর্ণ মাত্রার আগ্রাসনের পর থেকে উভয় পক্ষ তাদের বৃহত্তম বন্দী বিনিময়ের চেষ্টা করার সময় সর্বশেষ সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটল।
এএফপির সাংবাদিকরা ইউক্রেনের রাজধানীতে বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছেন। শহরের সামরিক প্রশাসনের প্রধান টাইমুর তাকাচেঙ্কো সতর্ক করে বলেছেন, ‘রাতটি সহজ হবে না’।
মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো বলেছেন, ‘রাজধানী আক্রমণের মুখে’ ছিল। তবে ‘বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কাজ করছে বলে তিনি জানান।
তাকাচেঙ্কো জানিয়েছেন, ‘এক ডজনেরও বেশি শত্রু ড্রোন’ রাজধানীর আকাশসীমায় ছিল। ‘কিয়েভ এবং আশেপাশের এলাকার কিছু ড্রোন ইতিমধ্যেই ভূপাতিত করা হয়েছে।
তিনি টেলিগ্রামে লিখেছেন, তবে নতুন ড্রোনগুলো এখনও রাজধানীতে আঘাত করছে।
তিনি আরো বলেন পাঁচ তলা আবাসিক ভবনের উপর ধ্বংসাবশেষ পওয়া গেছে।
খেরসন অঞ্চলেও রাতভর হামলার খবর পাওয়া গেছে।
মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন বলেছেন, রাশিয়ার রাজধানীর দিকে ধেয়ে আসা ১২টি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে।
শনিবার সকালে ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া রাতভর ১৪টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ২৫০টি ড্রোন নিক্ষেপ করেছে, যার ফলে ১৫ জন আহত হয়েছে।
রাশিয়ার সামরিক বাহিনী শনিবার জানিয়েছে, মঙ্গলবার থেকে ইউক্রেন তাদের লক্ষ্য করে ৭৮৮টি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
গত সপ্তাহে মস্কোকে লক্ষ্য করে কয়েক ডজন ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার হামলা ইঙ্গিত দেয়, মস্কো ‘যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছে’ এবং নিষেধাজ্ঞা আরো জোরদার করার জন্য তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তবে তিনি আরো বলেছেন, তিনি আশা করছেন কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে ইস্তাম্বুলে আলোচনার সময় বন্দী বিনিময়ের বিষয়ে সম্মত হবেন।
শনিবার, কিয়েভ এবং মস্কোর ঘোষণা অনুসারে, একই সংখ্যক ইউক্রেনীয় সৈন্যের সাথে ৩০৭ জন রাশিয়ান যুদ্ধবন্দী বিনিময় করা হয়েছে।
শুক্রবার প্রথম পর্যায়ে উভয় পক্ষই ৩৯০ জনকে মুক্তি দিয়েছে এবং মোট ১ হাজার জন করে বিনিময় করার আশা করা হচ্ছে।
রাশিয়া এই বিনিময়ের পরে শান্তি আলোচনার জন্য ইউক্রেনকে তাদের শর্তাবলী প্রেরণের ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে শর্তাবলী কী হবে তা উল্লেখ না করেই।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগে এই বিনিময়ের জন্য দুই দেশকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
তিনি তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘এর ফলে বড় কিছু হতে পারে?’।
পূর্বে বন্দী থাকা এক সৈন্য, ৫৮ বছর বয়সী ভিক্টর সিভাক, এএফপিকে বলেন, তার আবেগঘন স্বদেশ প্রত্যাবর্তন প্রকাশ করা কঠিন। ‘এটা বর্ণনা করা অসম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘আমি এটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না, এটা খুবই আনন্দের’।
তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধের পর, উভয় দেশেই হাজার হাজার যুদ্ধবন্দী রয়েছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সংঘাতের অবসানের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার হয়েছে। কিন্তু ক্রেমলিন যুদ্ধ বন্ধের জন্য তার সর্বোচ্চ দাবি থেকে সরে আসার কোনও লক্ষণ দেখায়নি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে পূর্ণ এবং নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির জন্য ইউরোপীয় চাপকে অগ্রাহ্য করে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন