নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। ফাইল ছবি
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করা হবে।
আজ বুধবার নির্বাচন ভবনে ‘আউট অব কান্ট্রি ভোটিং (ওসিভি)’ বিষয়ে লন্ডন প্রবাসী বাংলাদেশি ও বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডনের সঙ্গে আয়োজিত অনলাইন মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সভার আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন। এতে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ, যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম ও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এস এম হুমায়ুন কবীর।
সানাউল্লাহ বলেন, এবার প্রবাসী ভোটার নিবন্ধনে কোনো চার্জ নেওয়া হবে না। যদিও প্রতিটি ভোট কাস্ট করতে নির্বাচন কমিশনের প্রায় ৭০০ টাকা খরচ হবে। এর মধ্যে ৫০০ টাকা ব্যয় হবে প্রবাসে পরিবহন খাতে এবং বাকি ২০০ টাকা অন্যান্য খাতে। এটি একটি যৌক্তিক ব্যয় বলেই কমিশন মনে করছে।
তিনি বলেন, প্রবাসীদের জন্য দু’টি নিবন্ধন প্রক্রিয়া রয়েছে। প্রথমত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া, দ্বিতীয়ত প্রবাস থেকে ভোট দেওয়ার জন্য আলাদা নিবন্ধন করা।
যাদের হাতে স্মার্ট এনআইডি, ১০ বা ১৩/১৭ ডিজিটের লেমিনেটেড এনআইডি রয়েছে এবং যারা দেশের ঠিকানায় ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছেন, তারা বিদেশ থেকেও ভোট দিতে পারবেন। এ জন্য তাদের আলাদা রেজিস্ট্রেশন অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে।
তিনি জানান, ‘আউট অব কান্ট্রি ভোটিং রেজিস্ট্রেশন’ অ্যাপটি তৈরি হচ্ছে এবং এটি আগামী নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে উদ্বোধন করা হবে। বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রবাসীরা এই অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবেন। সাধারণভাবে প্রতিটি অঞ্চলের জন্য ৭ থেকে ১০ দিন সময় দেওয়া হবে এবং পরে আরও ৩ থেকে ৭ দিন অতিরিক্ত সময় রাখার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে কোনো ভোটার বাদ না পড়ে।
সানাউল্লাহ বলেন, বিদেশ থেকে ভোটগ্রহণে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর থেকেই প্রবাসীরা ভোট দিতে পারবেন। তবে কোনো আসনে আদালতের আদেশে শেষ মুহূর্তে প্রার্থী তালিকা পরিবর্তন হলে, সেই আসনে বিদেশ থেকে সংগৃহীত ভোট বাতিল হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, গ্লোবাল অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে প্রবাসী ভোটের হার খুবই কম। বিশ্বব্যাপী মাত্র ২ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবাসী নিবন্ধন করে থাকেন এবং তাদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়। ভারতে প্রায় ৪ কোটি প্রবাসী ভোটারের মধ্যে মাত্র ১ লাখ ১৯ হাজার নিবন্ধিত হয়েছিলেন এবং ভোট দিয়েছিলেন মাত্র ২ হাজার ৯০০ জন।
পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাতেও এ ব্যবস্থা এখনও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যায়নি। তারা এখনও ট্রায়াল ফেজে রয়েছে।
এনআইডি সেবা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০২৩ সাল থেকে প্রবাসে এনআইডি সেবা চালু করা হয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের লন্ডন, ম্যানচেস্টার ও বার্মিংহামে এনআইডি অফিস রয়েছে। ইউরোপে রোম ও মিলানে দু’টি অফিস চালু রয়েছে। এছাড়া সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, মালয়েশিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং খুব শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রে এ সেবা চালু হবে। এনআইডি সেবা মানেই মূলত ভোটার নিবন্ধন, পাশাপাশি এনআইডি সংগ্রহ ও সংশোধন সেবাও দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, কমিশনের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও বাদ পড়া ভোটারদের যুক্ত করার কাজ চলছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৪৫ হাজার নতুন ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়েছেন।
প্রবাসীদের জন্য সেবা সহজ করার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমরা ক্রমাগতভাবে এনআইডি ও ভোটার নিবন্ধন সেবাকে আরও সহজ করার চেষ্টা করছি। তবে দেশের বাস্তবতায় নিরাপত্তা ও নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করতে কিছু কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতেই হচ্ছে।’
মতবিনিময় সভায় যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডের প্রবাসীরা এনআইডি ও ভোটার নিবন্ধন সেবা আরও সহজ ও দ্রুত করার দাবি জানান।