বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘বাংলাদেশকে মুঠোর মধ্যে রাখতে ভারত শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার গ্যারান্টি দিয়েছিল। তাই রক্তাক্ত পন্থায় শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছিলেন।’
তিনি আজ বুধবার বিকেলে সিলেট নগরের যতরপুস্থ শহিদ সাংবাদিক আবু তাহের মোহাম্মদ তুরাবের বাসায় তার মায়ের সঙ্গে দেখা করে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন।
‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর উদ্যোগে তিনি তুরাবের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান। এ সময় রুহুল কবির রিজভী তুরাব হত্যার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতার আশ^াস দেন।
পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘একদিকে বাংলাদেশ থেকে পলাতক, যুবক-শিশু-কিশোর হত্যাকারী শেখ হাসিনাকে দিল্লী পুনর্বাসন করছে। অন্যদিকে সীমান্তে বাংলাদেশি নিরীহ নাগরিকদের গুলি করে হত্যা করছে। এতে কে হিন্দু, কে মুসলমান, কে বৌদ্ধ তা বিচার করছে না। তারা বাংলাদেশের মানুষকে হত্যা করছে।’
মূলত ভারত তাদের নিজেদের স্বার্থে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছিল মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব কব্জার মধ্যে রাখার চেষ্টা করছে ভারত। মুঠোর মধ্যে রাখতে চায় বলেই ভারত শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার গ্যারান্টি দিয়েছিল। তারই অংশ হিসেবে তারা রক্তপিপাসু শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তিনি বলেন, দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। যে সব কীট এখনও বিভিন্ন স্থানে বসে আছে এগুলো বেছে ফেলতে হবে। অন্যথায়, সরকার ও গণতন্ত্রের জন্য অশুভ শক্তি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
তিনি আরও বলেন, ‘যারা তার দ্বিতীয় বাকশালী শাসনের বিরুদ্ধাচারণ করতে গিয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যা, ক্রসফায়ার ও গুম-খুেনর শিকার হয়েছেন। তার অন্যতম একজন ছিলেন সিলেটের কৃতীসন্তান, জাতীয় নেতা এম ইলিয়াস আলী।’
শেখ হাসিনা সারা বাংলাদেশকে লাশের দেশে পরিণত করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শিশু-কিশোর-যুবকসহ নানা বয়সের মানুষের রক্ত পান করে শেখ হাসিনা মনে করেছিলেন তিনি আবারও ক্ষমতায় টিকে থাকবেন। কিন্তু একের পর এক নিজেদের আত্মদানের মাধ্যমে এদেশের ছাত্র-জনতাকে যেভাবে তাকে ঘিরে ধরেছিল শেখ হাসিনা তার টেরই পাননি।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তরুণ-যুবকদের আত্মদানের কথা স্মরণ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বাচ্চা ছেলেরা একের পর এক জীবন দিচ্ছিল আর সহকর্মী বন্ধুরা তার লাশ দেখে এগিয়ে এসেছিল নিজের জীবন দেয়ার জন্য। এই আত্মত্যাগ, মহিমান্বিত আত্মদান এই বাংলাদেশে এক উজ্জল অধ্যায় হয়ে থাকবে।’
সাংবাদিক আবু তাহের মোহাম্মদ তুরাবের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘১৯ জুলাই আমি ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গ্রেপ্তার হই। এরপরেই খবর পেয়েছি সিলেটে বিএনপির কর্মসূচির খবর সংগ্রহ করার সময় পুলিশের গুলিতে একজন সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে। মাত্র দুই মাস আগে যার শুভ পরিণয় হয়েছিল। গণতন্ত্রের লড়াইয়ে তুরাব অন্যতম একজন শহিদ। এই আত্মদান বৃথা যেতে পারে না।’
ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন ও সাইবার সিকিউরিটি আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদকে চিরস্থায়ী করে আওয়ামী সরকার এইসব আইনকে ক্ষমতায় টিকে থাকার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। বহু মানুষকে জেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। তাই, এই আইন বাতিল করতে হবে।
সাংবাদিকদের রিজভী বলেন, দেশকে সুসংহত করতে হলে বর্তমান অন্তবর্তী সরকারকে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। বিজয় ধ্বংস করতে একপক্ষ দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তাই দেশের স্বার্থে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার চিন্তা করতে হবে। জনগণের আকাঙঙ্খা পুরন করতে হলে নির্বাচনের বিকল্প নেই।
এ সময় সঙ্গে ছিলেন, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর আহবায়ক আতিকুর রহমান রুমন, উপদেষ্টা আশরাফ উদ্দিন বকুল, সিলেট জেলা বিএনপি সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ সিদ্দিকী, জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী ও মহানগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, সিসিকের সাবেক প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কয়েস লোদীসহ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতারা।