প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, ব্যক্তিগত ও জাতীয় উন্নয়নের জন্য বহুভাষিক শিক্ষা গ্রহণ অপরিহার্য।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব ল্যাঙ্গুয়েজেসের আয়োজনে ‘ভাষার রূপান্তর : ডিকলোনিয়াল প্রেক্ষাপটে ভাষা শিক্ষার প্রভাব’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে উপনিবেশিক প্রভাবের কারণে ভাষা শিক্ষার পরিবর্তনসমূহ পর্যালোচনা, পরিবর্তনগুলো কিভাবে বৈশ্বিক শিক্ষাদানের পদ্ধতি ও ধরণকে প্রভাবিত করছে তা নিয়ে আলোচনা ।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত কনফারেন্সে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে ভাষার যাত্রার ঐতিহ্য রয়েছে। আমাদের মাতৃভাষা আন্দোলনের জন্য আত্মত্যাগ করতে হয়েছে।
বাংলা ভাষার মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে প্রকাশ করি এবং বাংলা ভাষা হলো আমাদের জাতীয় পরিচয় ও গর্বের ভিত্তি।
যোগাযোগের জন্য ভাষা একটি হাতিয়ারের চেয়েও বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভাষা আমাদের ইতিহাস, পরিচয় এবং আকাঙ্খা বহন করে। ক্রমবর্ধমান বিশ্বে ভাষা শিক্ষার সুযোগ শুধু একটি ভাষায় হলে হবেনা। অবশ্যই বহুভাষিক শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। যেখানে শিক্ষার্থীরা কেবল তাদের মাতৃভাষায়ই নয় বরং ইংরেজি, চীনা, আরবি ইত্যাদি বৈশ্বিক ভাষাতেও দক্ষতা অর্জন করতে পারবে। নিজেদের সাংস্কৃতিক শিকড় রক্ষা করে বিশ্ব নাগরিকত্বের জন্য এটি তাদের প্রস্তুত করবে।
বিধান রঞ্জন বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে যে, মাতৃভাষায় প্রাথমিক শৈশবের শিক্ষা উল্লেখযোগ্যভাবে সাক্ষরতার হার, জ্ঞান বিকাশ এবং সামগ্রিক শিক্ষার ফলাফলকে সমৃদ্ধ করে। একই সাথে বহুভাষিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভূক্তি এবং আন্ত:সাংস্কৃতিক বোঝাপড়ায় উৎসাহিত করার সাথে সাথে বিশ্বের সাথে যুক্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে শিক্ষার সকল স্তরে শিক্ষার্থীদের ভাষাগত চাহিদা মেটাতে গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন
হতে হয় উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং সম্পদ বরাদ্দের মতো সমস্যাগুলি ক্রমাগত বাধার সৃষ্টি করে। শ্রেণীকক্ষের অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, শিক্ষা উপকরণের ঘাটতি রয়েছে।
সম্মেলনটি নতুন ধারণাকে অনুপ্রাণিত এবং কার্যকর সমাধানের পথ প্রশস্ত করবে বলে আশা ব্যক্ত করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা। ভাষা শিক্ষা, বহুভাষিকতা, শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে গঠনমূলক আলোচনা এবং ছাত্রদের ক্ষমতায়ন, অন্তর্ভূক্তি প্রচার এবং সামাজিক ন্যায় বিচারকে উৎসাহিত করতে একসাথে কাজ করতে গবেষক, শিক্ষাবিদ এবং অনুশীলনকারীদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
কনফারেন্সে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৩০০ জনেরও বেশি গবেষক, শিক্ষার্থী এবং পেশাজীবী অংশ নিচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেব উপস্থিত ছিলেন ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টসের অধ্যাপক ও লেখক সলিমুল্লাহ খান, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা মনজুর আহমেদ, ব্র্যাক ইউনিভিার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ফারহাত আনোয়ার, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, ব্র্যাক ইউনিভিার্সিটির বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের চেয়ারপার্সন তামারা হাসান আবেদ, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ ল্যাঙ্গুয়েজেসের সিনিয়র ডিরেক্টর সৈয়দা সারওয়াত আবেদ ও ডিরেক্টর ড. শায়লা সুলতানা।