‘শহীদ সরোয়ার জাহান মাসুদ জীবদ্দশায় বলতো- এ আন্দোলন পরিবর্তনের। অনেক বড় আন্দোলন। ৪ আগস্ট মহিপালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংগ্রহনকালে সন্ত্রাসীদের বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমার ছেলের জীবন। চারটি বুলেটের মধ্যে দুটি বুলেট বুকে লেগেছে। সন্তানের জন্য মায়ের কষ্ট কেউ বুঝে না। পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আমার ছেলে বেঁচে নেই। সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।’- এ কথা বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ফেনী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী শহীদ মাসুদের মা বিবি কুলসুম।
ফেনী সরকারি কলেজের অপর শহীদ শিক্ষার্থী ইসতিয়াক জাহান শ্রাবনের মা ফাতেমা আক্তার শিউলী বলেন, ৩ আগস্ট রাতে শ্রাবণের সাথে শেষ দেখা হয়। রাতে ভাত চেয়েছিল।
তাকে কিচেন থেকে নিয়ে খেতে বলেছিলাম। এরপর খেয়েছে কিনা জানিনা। পরদিন ৪ আগস্ট সকাল ১১টায় বের হয়ে আর বাসায় ফিরেনি। মহিপাল ফ্লাইওভারের নিচে আন্দোলন করতে গিয়ে ঘাতকদের গুলিতে শহীদ হয়। তার শরীরে ৬টি বুলেট লেগেছিল।’
বৃহস্পতিবার ফেনী সরকারী কলেজের আয়োজনে বৈষমবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরণসভায় দুই শহীদের মায়ের বক্তব্যে আপ্লুত হয়ে পড়েন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এসময় অনেককে দেখা যায় চোখের জল মুছতে।
ইতিহাস বিভাগের প্রধান, প্রফেসর ফজলে এলাহীর সভাপতিত্বে স্মরণসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ এনামুল হক খন্দকার। সভার শুরুতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও আহতদের সুস্থতা কামনায় দোয়া-মুনাজাত পরিচালনা করেন কলেজ জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ উল্যাহ।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারি অধ্যাপক মুবাশ্বেরা আক্তারের পরিচালনায় স্মরণ সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ আইউব, শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক ফরিদ আলম ভূঞা ও শহীদ শ্রাবণের পিতা নেছার আহমদ।
বক্তব্য রাখেন ছাত্র আন্দোলনে আহত রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার, কলেজ ছাত্রদলের আহবায়ক আবদুল হালিম মানিক, ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ ইউনুস, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক আবদুল্লাহ আল জোবায়ের, শহীদুল ইসলাম, সাবেক সমন্বয়ক মুহাইমিন তাজিম, আবদুল আজিজ, এফসিডিএস সভাপতি শাফায়েত জামিল, সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান নোমান, শিক্ষার্থী সানী মজুমদার, সোহরাব হোসেন, জাহিদুল আলম সাগর ও ওমর ফারুক।
সভা শেষে শহীদ সরোয়ার জাহান মাসুদ ও ইসতিয়াক আহমেদ শ্রাবণের পিতা-মাতাকে উপহার দিয়ে সম্মানিত করা হয়।