সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় নাগরৌহার ফসলি মাঠগুলোতে বন্যার পানি বের হতে না পেরে জলাবদ্ধতায় পরিনত হয়েছে। নাগরৌহার মাঠসহ আশেপাশের মাঠগুলোতে চলতি মৌসুমে সরিষা ফসলের আবাদ করতে পারছে না স্থানীয় কৃষকেরা। এলাকা ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায় এখনো ওই সকল জমিতে পানি জমে আছে। জমির পানি শুকাতে আরো ১৫ থেকে ২০দিন লাগবে। স্থানীয় কৃষকেরা বার বার জমিতে গিয়ে জমির পানি পর্যবেক্ষণ করছে। এদিকে চলতি মৌসুমে সরিষা আবাদে নাবি হতে চলেছে। এরপরও ১৫ থেকে ২০ দিন দেরি হলে পুরোই নাবি হয়ে যাবে। নাবি ফসলে ফলন কম এবং প্রাকৃতিক ভাবে দূর্যোগের মুকাবিলা করতে হয়। মাঠে গিয়ে কৃষকেরা তার জমির জমে থাকা পানি দেখছে আর ভাবছে আর কতদিন লাগবে জমির পানি শুকাতে তার হিসাব করছেন। চলতি মৌসুমে সরিষা আবাদ করতে পারবে কিনা।
এলাকার সচেতন মহল মনে করেন ওই সকল বিলের জলাবদ্ধতায় জমে থাকা পানি পাইপ বসিয়ে পানি নিষ্কাশন করতে পারলে কিছুটা হলেও জলাবদ্ধতার সমস্যার সমাধান হবে।
উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের
ছয়টি মৌজা নাগরৌহা , ভদ্রকোল , বাখুয়া , পংরৌহা , চড়ুইমুড়ী ও ভেংড়ী। এলাকাবাসীরা জানান স্বাভাবিক বর্ষা হলেই মৌজাগুলোর বেশীর ভাগ আবাদী জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। বন্যার পানি কচুয়া ( বিল সূর্য ) নদীর শাখা বুড়ির বিল নালা হয়ে মৌজাগুলোতে পানি ঢোকে কিন্তু বের হতে পারে না। প্রায় দুই যুগ আগে স্থানীয় চরপাড়া এলাকায় একজন ইট ভাটা মালিক নিজ উদ্যোগে ভেংড়ী মৌজায় কচুয়া নদী থেকে প্রায় পাচশো ফুট দীর্ঘ একটি নালা খনন করেন। তিনি নিজ ইট ভাটা ব্যবসার সুবিধায় জমি ভাড়া (লিজ) নিয়ে নালাটি খনন করেন। সে থেকেই ভেংড়ী নালা হয়ে মৌজাগুলোর আবাদী মাঠের জমি থেকে অতি সহজেই পানি নিষ্কাশন হতো। এছাড়া বুড়ির বিল নালা হয়ে বন্যার পানি ঢুকলেও বের হতে পারে না বলে এলাকার লোকজন জানান। প্রায় চার বছর আগে ভেংড়ী নালাটি জমির মালিক ভরাট করে ফেলেন এতে পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ বন্ধ হয়ে যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে নাগরৌহা ও চরপাড়া এলাকার সুলফিগাড়ী মাঠে প্রায় আড়াইশো বিঘা জমিতে বন্যার পানি জমে আছে। জমিগুলো বন্যার পানির জলজ আগাছায় ভরপুর হয়ে আছে। বন্যার পানি এবারে জমি থেকে সহজে শুকাচ্ছে না বলে জানা গেছে। আবাদী মাঠের উপরের জমিগুলোয় সরিষা ফসলের আবাদে আগাছা পরিস্কার করা হচ্ছে। এসব জমিতে সরিষা আবাদ নাবী করে হবে। প্রতিবেদককে কৃষক চান মিয়া , মোকাব্বর আলী , আঃ কুদ্দুস , ছাইদুর রহমান ও আরো কয়েকজন জানান সুলফিগাড়ী খাপাল মাঠ বলে পরিচিত জমি থেকে যখন পানি শুকাবে তখন সরিষা ফসলের আবাদের সময় পেরিয়ে যাবে। একেবারে নাবী করে আবাদ করা হলে ফলন তেমন হবে না। আর জমিতে বোরো ( ইরি ) ধান ফসলের আবাদ পিছিয়ে যাবে। সব মিলিয়ে সরিষা ফসলের আবাদ করা সম্ভব হবে না। আগাম করে বোরো ধান আবাদ করা যাবে বলে জানান। কৃষকদের অনেকেই বলেন কচুয়া নদী বন্যার পানি হলে বুড়ির বিল নালা হয়ে বন্যার পানি সহজেই নাগরৌহাসহ আরো কয়েকটি মৌজা এলাকায় ঢুকে পড়ে। তবে বুড়ির বিল নালা কয়েক জায়গায় প্রায় ভরাট হওয়ায় মাঠগুলো থেকে পানি আর বের হতে পারে না। নাগরৌহার সুলফিগাড়ী মাঠের জলাবদ্ধতা কাটাতে মাটির নীচে পাইপ বসিয়ে কচুয়া নদীতে পানি নিষ্কাশন করার বিষয়ে কৃষকদের মত মিলেছে।
বিএডিসির পানাসি প্রকল্পের উল্লাপাড়া জোনের সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহী আমিন বলেন সরেজমিনে নাগরৌহা মাঠে গিয়ে সব দেখে মাঠের পানি সহজেই নিষ্কাশন ব্যবস্থায় দরকারী উদ্যোগ নেবেন। তিনি ভুগর্ভে ( মাটির নীচে ) পাইপ বসিয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থায় গুরুত্ব দেবেন বলে জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমী জানান জলাবদ্ধতায় সরিষা ফসলের আবাদ করা না গেলে জমির মালিক কৃষকদের লোকসান হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ইউএনও) আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত বলেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার বিষয় তিনি শুনেছেন। দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।