×
  • প্রকাশিত : ২০১৮-০৫-০৩
  • ৯৩৯ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক
লাল-সবুজের বাংলাদেশ। এই বাংলার সবুজ জমিনে পড়ে আছে লাল পোশাকের বিউটি আক্তারের লাশ। অনলাইনভিত্তিক সমাজমাধ্যম মারফত দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে এই ছবি। হবিগঞ্জের বিউটি ধর্ষণের শিকার হয়েছে। বিচার চাইতে গিয়ে খুন হয়েছে। আবেগে ভেসে যায় দেশ। প্রতিবাদমুখর হয় ভার্চুয়াল দুনিয়া। ধর্ষক বাবুল, খুনি বাবুলের বিচারের দাবিতে আওয়াজ ওঠে। জেগে ওঠে বাস্তব জগতের আইনের রক্ষকরা। তবু পুলিশ জানায় কঠিন অথচ ভিন্নতর এক সত্য। শায়েস্তাগঞ্জের বিউটিকে বাবুল ধর্ষণ করেছে ঠিকই। কিন্তু তার বাবাই তাকে হত্যা করিয়েছে। বিউটির বাবা ছায়েদ আলীর জবানবন্দি উদ্ধৃত করে ৭ এপ্রিল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা এসব কথা জানান। বাবুলদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ময়না মিয়া প্ররোচনা দেন বিউটির বাবাকে। প্রায়ই ছায়েদকে বোঝাতে থাকেন, বাবুল বিয়ে না করলে বিউটিকে কেউ বিয়ে করবে না। তার অন্য সন্তানদেরও বিয়ে হবে না। ময়নার কূটকথা হচ্ছে, ‘এর চেয়ে বিউটিকে মেরে বাবুল ও তার মাকে ফাঁসানোও হলো এবং প্রতিশোধও নেওয়া হবে।’ একপর্যায়ে ময়নার ফাঁদে ছায়েদ পা দেন উল্লেখ করে পুলিশ কর্মকর্তা বিধান ত্রিপুরা বলেন, পরে ১০ হাজার টাকায় পেশাদার খুনি ভাড়া করে এবং তাকে আড়াই হাজার টাকা অগ্রিম দেন ময়না। ‘ঘটনার দিন রাতে ছায়েদ, ময়না ও ভাড়াটে খুনি গুণিপুর গ্রামে গিয়ে বিউটিকে চেয়ারম্যানের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে নিয়ে আসে। পরে লাখাই উপজেলার হরিণাকোন গ্রামে ভাড়াটে লোক বিউটির হাত-পা বেঁধে রাখে এবং ময়না ছুরি দিয়ে পাঁচটি আঘাত করে হত্যার পর লাশ হাওরে ফেলে রাখা হয়।’ বিউটি ধর্ষিতা। বিউটি নির্যাতিতা। রাষ্ট্রের যে বিধি তাতে ধর্ষক বাবুলের বিচার হওয়ার কথা। অপরাধী হিসেবে মাথা নিচু করে থাকার কথা তার পরিবারের। কিন্তু সমাজ চলছে সেই উল্টো স্রোতেই। এখানে বিউটিকে লজ্জায় মুখ ডেকে থাকতে হয়। বিউটিদের পরিবারকেই অনেকটা ‘অচ্ছুত’ হয়ে পড়তে হয়। আর ধর্ষক প্রভাবশালী হলে তো কথাই নেই। প্রতিনিয়ত নিপীড়নে থাকতে হয় আক্রান্তজনকে। সমাজের এসব আগল ভাঙতে হবে। ধর্ষণ-হেনস্তা-হয়রানির জন্য লজ্জিত হতে হবে অভিযুক্তকে, অভিযোগকারীকে নয়। এর জন্য শুধু বিচারের বাণীই যথেষ্ট নয়। পারিবারিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক আচারও বদলাতে হবে। ধর্ষণকে নির্যাতন হিসেবে দেখতে হবে। ধর্ষকের বিচারের বিষয়ে সোচ্চার হওয়ার পাশাপাশি নির্যাতিত যাতে মাথা উঁচু করে থাকতে পারে, সেই পরিবেশ রচনা করতে হবে, সেই পথে হাঁটতে হবে বাংলাদেশকে। মনে রাখতে হবে, এই দেশটা পাওয়ার পেছনে লাখ লাখ নারীকে নির্যাতন সইতে হয়েছে। যারা বীরাঙ্গনা খেতাব পেলেও হয় পরিবার, নয় সমাজের কারণে বিষয়টি গোপন রাখতে হয়েছে। আজ এতটা বছর পরে তারা মুক্তিযোদ্ধা খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। তাদের ত্যাগের বিনিময়ে আসা স্বাধীনতার সুফল পৌঁছে দিতে হবে নির্যাতিত-নিপীড়িত সব নারীর কাছে। কেননা নারীর অগ্রযাত্রা আজও মসৃণ নয় আমাদের সমাজে। ঘরে ঘরে নিপীড়ন। পথে পথে হয়রানি। এর দায় কে নেবে? কী করছে রাষ্ট্র? প্রশ্ন অনেক। উত্তর কিন্তু অজানা নয়। অতএব, জাগো গো ভগিনী, মাভৈ!

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat