×
ব্রেকিং নিউজ :
  • প্রকাশিত : ২০১৯-০৩-০৭
  • ৪২০ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক
৭ মার্চের ভাষণ শুধু বাংলাদেশের নয় সারা বিশ্বের সম্পদ : প্রধানমন্ত্রী
নিউজ ডেস্ক:- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছে, ৭ মার্চের ভাষণ শুধু বাংলাদেশে সম্পদ নয়, এটি এখন সারা বিশ্বের সম্পদ হয়েছে। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। সরকারি দলের সদস্য তোফায়েল আহমেদ পয়েন্ট অব অর্ডারে এই আলোচনার সূচনা করেন। এই ভাষণের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যে অসহযোগের ডাক দিয়েছিলেন এবং বাঙালি জাতিকে এই অসহযোগ আন্দোলন থেকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি সশস্ত্র যুদ্ধের দিকে নিয়ে গেছেন। এই ভাষণে সমস্ত নির্দেশনা ছিল, এমনকি এই ভাষণে তিনি যুদ্ধের প্রস্তুতি কিভাবে নিতে হবে সেই নির্দেশনাও তিনি দিয়েছেন। একটি দেশকে স্বাধীন করার জন্য যা যা করণীয় তিনি দীর্ঘদিন ধরে তাঁর প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। প্রথমে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, এরপর ৬ দফা, যা ছিল জাতির মুক্তি সনদ। এই ৬ দফা দেয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা হয়েছে, বাংলার ছাত্র জনতা গণঅভ্যূত্থান করে, এরফলে পাকিস্তান সরকার মামলা প্রত্যাহারে বাধ্য হয়েছিলো। শেখ হাসিনা বলেন, এই ভাষণ দিয়েছেন সম্পূর্ণ নিজে থেকে, তার হাতে কোন নোট ছিল না। মুক্তিকামী জনতা তারা এসেছিলেন সমগ্র বাংলাদেশ থেকে। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসেছিলেন ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ৩ মার্চ সংসদ অধিবেশন ডেকে ইয়াহিয়া খান যখন বাতিল করে দিল তখন জাতির পিতা ঘোষণা দিলেন যে, আমি ৭ মার্চে ভাষণ দেব। সেই ভাষণ শোনার জন্য সমগ্র বাংলাদেশ থেকে মানুষ ছুটে এসেছিল। তাদের হাতে ছিল বাঁশের লাঠি। মাঝি যোগদান করেছিল নৌকার বৈঠা-লগি নিয়ে। সব মানুষ তৈরি হয়ে এসেছিলেন। এই ভাষণের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা যেমনিভাবে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, তেমনি যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়ে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলা, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তিনি জানতেন হয়তো এই ভাষণের পর হয়তো তিনি বেঁচে নাও থাকতে পারেন। সেজন্য একথাও তিনি বলেছিলেন ‘আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি’, সে পূর্বাভাসও তিনি দিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, এই ভাষণ জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। ২৫ মার্চ যখন পাকিস্তান হানাদার বাহিনী হামলা করে এদেশের গণহত্যা চালায়, তখন তিনি তাঁর স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। যুদ্ধ মূলত তখনই শুরু হয়। জয়দেবপুরে বাঙালিরা পাকিস্তান সেনাদের বাঁধা দিয়েছিল। বাঙালি মূলত যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতই ছিল। ভাষণের পর এ দেশের জনগণ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং আমরা বিজয় অর্জন করি। ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ দিতে যাবেন তখন অনেকেই অনেকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কোন কোন নেতা নোট দিচ্ছেন। কোন কোন নেতা ভাষণ বলে দিচ্ছেন। কোন কোন নেতা বা সিএসপি অফিসাররা নির্দেশনা দিচ্ছেন। অনেক বুদ্ধিজীবী অনেক চিন্তাবিদ তারা পয়েন্ট লিখে নিয়ে এসেছেন। এক সময় টেবিলে কাগজের স্তুপ হয়ে গেল। আমার আম্মা বাবাকে বললেন, তুমি বাংলাদেশের মানুষের মন বোঝো, কে কী বলল তা না শুনে তোমার মন যেটা বলবে ভাষণে তুমি তাই বলবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হাজার হাজার লোক সমবেত হয়েছে। তাদের ভাগ্য তোমার হাতে। তুমি সারাটা জীবন সংগ্রাম করেছ এ দেশের মানুষের জন্য। তুমি জানো, মানুষের জন্য কোনটা প্রয়োজন, কোনটা প্রয়োজন না। তোমার মনে যে কথা আসবে তুমি তাই বলবে। সেটাই এদেশের মানুষের জন্য সবচেয়ে সত্য হিসেবে পরিগণিত হবে। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে তাই বলেছিলেন।’ শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫-এর পর এই ভাষণটি নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করতে তখনকার পাকিস্তান সরকারও দেয়নি। কিন্তু সত্যকে কেউ অস্বীকার করে মুছে ফেলতে পারে না, এটা প্রমাণ হয়েছে। আজ সেই ভাষণ অমূল্য বিশ্বসম্পদ ও ঐতিহ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করে, তা সংরক্ষণ করার এবং বিশ্বকে জানানোর দায়িত্ব নিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো)। তিনি বলেন, ‘একটি জাতি হিসেবে আমরা আজ মর্যাদা পেয়েছি। ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র পেয়েছি। জাতির পিতার কাছ থেকে আমরা আজ সারা বিশ্বে আমাদের পরিচয় পেয়েছি। এগুলো বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনার ও সংগ্রামের ফসল। আর তার সাথে যারা ছিলেন তারাও এর ভাগীদার। শেখ হাসিনা বলেন, যারা ভাষণকে নিষিদ্ধ করেছে, তারা আসলে কতোটা অন্ধকার জগতে বাস করতো যে, তারা এই ভাষণের মূল্যই তারা দিতে পারেনি। আজকের বাংলাদেশ আর পিছিয়ে পড়া না। বিশ্বের আমরা আজ উন্নয়নের রোল মডেল। আজ বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। জাতির পিতার স্বপ্ন ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত দেশ আমরা গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। পয়েন্ট অব অর্ডারে আরো আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের সদস্য আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, আব্দুল মতিন খসরু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন, অধ্যাপক আলী আশরাফ ও তাহজিব আলম সিদ্দিকী। বিরোধী দলের সদস্য মুজিবুল হক, জাসদের সদস্য হাসানুল হক ইনু, মইন উদ্দিন খান বাদল ও সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহম্মেদ। আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ সদস্যরা বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের একটি পরিপূর্ণ দিক-নির্দেশনা। তাঁর এই ভাষণ শোষিত, বঞ্চিত ও লাঞ্চিত মানুষের প্রেরণার উৎস হয়ে আছে। এই ভাষণ কখনো পুরনো হবার নয়। তারা বলেন, মার্চ মাস স্বাধীনতার মাস, এই মাস বাংলাদেশের অগ্নিঝরা মাস, এই মাসেই জাতীয় পতাকা ও বাংলাদেশের সীমানা অর্জনের মাস, এই মাসেই বঙ্গবন্ধুর জন্ম। এই মার্চ মাসেই বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুর জন্ম, তাই বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু এক ও অভিন্ন সত্ত্বা। বঙ্গবন্ধুকে অনেক সময় আদালতের কাঠগড়ায়, অনেক সময় ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। অনেকে তাঁকে খলনায়ক বানানোর অপচেষ্টা চালিয়েছে। বঙ্গবন্ধু কেবল একজন ব্যক্তি নন, বঙ্গবন্ধু একটি পতাকা, একটি মানচিত্র, একটি দেশ। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তার মহাকাব্য, একটি আন্দোলন, একটি বিপ্লব, জাতি বিনির্মাণের কারিগর। তিনি হচ্ছেন রাজনীতির কবি, জনগণের বন্ধু, রাষ্ট্রের স্থপতি, ইতিহাসের মহানায়ক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat