×
ব্রেকিং নিউজ :
  • প্রকাশিত : ২০১৯-০৪-১৪
  • ৪৮১ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির বাণী

রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
“শুভ বঙ্গাব্দ ১৪২৬।
উৎসবমুখর বাংলা নববর্ষের এই দিনে আমি দেশবাসীসহ বাঙালিদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
বাংলা নববর্ষ বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ উৎসব সর্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক। এর মধ্যে নিহিত রয়েছে বাঙালির আত্মপরিচয় এবং জাতিসত্তা বিকাশের শেকড়। স্বাধীনতা পূর্বকালে আমাদের সংস্কৃতি ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাবোধের ওপর বারবার আঘাত এসেছে। নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতিকে ভিন্নধারায় প্রবাহিত করতে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে ভিনদেশী ভাষা ও সংস্কৃতি। কিন্তু বাঙালি জাতি তা কখনো মেনে নেয়নি। তাইতো প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ বাঙালি সংস্কৃতি ও জাতিসত্তা বিকাশের প্রবল শক্তি নিয়ে উপস্থিত হয়। জানান দেয় আমি সর্বজনীন। এখানে ধর্ম-বর্ণ-দল-মতের কোনো বিভেদ নেই। তাইতো এই উৎসবটি বাঙালির জীবনাচার, চিন্তা-চেতনা, বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে একাকার হয়ে মিশে আছে আবহমান কাল থেকে। বাংলা নববর্ষ তাই কেবল আনুষ্ঠানিকতানির্ভর কোনো উৎসব নয়; বরং তা বাঙালির ধর্মনিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, শেকড় সন্ধানের অবিনাশী চেতনাবাহী দিন।
বাংলা নববর্ষের এই বর্ণিল উদ্যাপন মানুষের মাঝে অনাবিল আনন্দ, উৎসাহ-উদ্দীপনা আর সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে আসে। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে বাংলার লোকজ-সংস্কৃতির মূল্যবান অনুষঙ্গ যেমন-যাত্রাগান, পালাগান, পুতুলনাচ, হালখাতা, অঞ্চলভিত্তিক লোকসংগীত, খেলাধুলাসহ গ্রামীণ মেলা যেমন প্রাণ ফিরে পায়, তেমনি বাংলার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প হয়ে ওঠে উজ্জীবিত। ব্যবসা বাণিজ্যেও এর ইতিবাচক প্রভাব তাৎপর্যপূর্ণ।
আমাদের বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃত। পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা ২০১৬ সালে জাতিসংঘের ইউনেস্কো কর্তৃক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে, যা বাঙালি হিসেবে বিশ্বের বুকে আমাদের মর্যাদাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ঋদ্ধ। যেখানে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস বা সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই। পারস্পরিক সহমর্মিতা, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি যে জাতির চিরকালীন ঐতিহ্য তা কেউ নস্যাৎ করতে পারবে না। বাংলা নববর্ষের চেতনা অব্যাহত রেখে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনে প্রেরণা এবং শক্তি হিসেবে কাজ করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
অতীতের গ্লানি, দুঃখ, জরা মুছে, অসুন্দর ও অশুভ পেছনে ফেলে নতুন কেতন উড়িয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪২৬ জাতীয় জীবনে আরো

সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক-এ প্রত্যাশা করি।
খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর বাণী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
“বাংলা নববর্ষ ১৪২৬ উপলক্ষে আমি দেশবাসী ও প্রবাসী বাঙালিসহ সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
নতুন বছরের প্রথম দিনে আমরা অতীতের গ্লানি ভুলে জীবনের এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে আশায় বুক বাঁধি। দেনা-পাওনা চুকিয়ে নতুন করে শুরু হয় জীবনের জয়গান। পহেলা বৈশাখ তাই যুগ যুগ ধরে বাঙালির মননে-মানসে শুধু বিনোদনের উৎস নয়, বৈষয়িক বিষয়েরও আধার।
বাংলা নববর্ষের উন্মেষ মূলত গ্রামীণ জীবন ঘিরে। হালখাতা উৎসব এবং গ্রামীণ মেলা ছিল একসময় এর মূল আকর্ষণ। হালখাতা উৎসব কালক্রমে প্রবেশ করেছে নগর জীবনে। দেশের প্রতিটি শহরেই পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ ঘিরে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। রাজধানী ঢাকায় আশির দশকের সংযোজন ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’, যা আজ জাতিসংঘের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে পণ্যের ক্রয়-বিক্রয়, হালখাতা উৎসব, নতুন পোশাক এবং মিষ্টান্নসহ হরেক রকমের খাবারের জমজমাট ব্যবসা-সব মিলিয়ে বাংলা নববর্ষ বিনোদনের পাশাপাশি আজ দেশের অর্থনীতিতে নতুনত্ব এনেছে।
আমরা বাঙালির এই শাশ্বত সর্বজনীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখতে নানা উদ্যোগ নিয়েছি। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বাংলা নববর্ষ উৎসব ভাতা প্রবর্তন করা হয়েছে।
বাংলা নববর্ষ এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। বাঙালি জনগোষ্ঠী বর্ষবরণ উৎসবকে ধারণ করেছে তাদের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে।
আওয়ামী লীগ সরকার মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আজ জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়ন করছি। গত ১০ বছরে আমরা দেশের প্রতিটি খাতে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি অর্জন করেছি। আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ‘রোল মডেল’। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদক নির্র্মূলে আমাদের সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করে কাজ করে যাচ্ছে। আমরাই বিশ্বে প্রথম শত বছরের ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ বাস্তবায়ন শুরু করেছি। অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বিশ্বের ৫টি দেশের একটি বাংলাদেশ। উন্নয়নের ৯০ ভাগ কাজই নিজস্ব অর্থায়নে করছি। গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বিপুলভাবে বিজয়ী করেছে। আমাদের ওপর দেশের মানুষ যে দৃঢ় আস্থা রেখেছেন, আমরা তার পরিপূর্ণ মূল্যায়ন করব। আমরা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের আগেই উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করব, ইনশাআল্লাহ।
আসুন, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মনিয়োগ করি। গড়ে তুলি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।
বাংলা নববর্ষ ১৪২৬ আমাদের সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু,
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat