×
ব্রেকিং নিউজ :
  • প্রকাশিত : ২০১৯-০৪-১৬
  • ৫২১ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক
ঐতিহাসিক ‘মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী

ঐতিহাসিক ‘মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির বাণী

রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ১৭ই এপ্রিল ঐতিহাসিক ‘মুজিবনগর দিবস’ উপলক্ষে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
“ঐতিহাসিক ‘মুজিবনগর দিবস’ উপলক্ষে আমি দেশবাসী এবং প্রবাসে বসবাসরত সকল বাংলাদেশিকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। জাতীয় পর্যায়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদ্যাপন তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমি মনে করি।
‘মুজিবনগর দিবস’ আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। আমি এ দিনে পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করি জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান-কে যাঁরা বঙ্গবন্ধুর কারাবাসকালীন মুজিবনগর সরকার পরিচালনা করেন। সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করি মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদ, মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক-সংগঠকসহ আপামর জনগণকে যাঁরা মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য অসামান্য অবদান রেখেছেন।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনসহ পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলনের ফসল আমাদের স্বাধীনতা। যার পুরোভাগে ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু জাতির আশা-আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬-এ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ২৬-এ মার্চ ঘোষিত স্বাধীনতা দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করেন এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারীর মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন। ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলার আ¤্রকাননে মুজিবনগর সরকার শপথ নেওয়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার যাত্রা শুরু করে।
মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা, বিশ্বদরবারে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টি, শরণার্থীদের ব্যবস্থাপনা, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশবাসীর পাশে দাঁড়ানোসহ মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার পরিচালনায় এ সরকার সার্বিক দায়িত্ব পালন করে। মুজিবনগর সরকারের যোগ্য নেতৃত্ব, সঠিক দিকনির্দেশনা ও রণকৌশল মুক্তিযুদ্ধকে সফল পরিসমাপ্তির দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। অবশেষে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় আমাদের কাক্সিক্ষত বিজয়।
বঙ্গবন্ধু সবসময় রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট তিনি ধানমন্ডির নিজ বাড়িতে সপরিবারে মর্মান্তিকভাবে নিহত হন। তাঁর সে স্বপ্ন পূরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে নিরবছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আজ অপ্রতিরোধ্য গতিতে উন্নয়নের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে বৃহৎ প্রকল্প পদ্মাসেতু নির্মিত হচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপিত হয়েছে। ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অর্জনসহ মাথাপিছু আয় বাড়ছে, কমছে দারিদ্র্যের হার। সরকার বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে ‘রূপকল্প ২০২১’ও ‘রূপকল্প ২০৪১’ ঘোষণা করেছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করতে সক্ষম হবো, ইনশাআল্লাহ।
স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের নিকট সঠিকভাবে তুলে ধরা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। দেশের তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার পাশাপাশি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতি গঠনমূলক কাজে অবদান রাখবে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসে- এ প্রত্যাশা করি।
আমি মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করি।
খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসে প্রধানমন্ত্রীর বাণী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৭ই এপ্রিল ঐতিহাসিক ‘মুজিবনগর দিবস’ উপলক্ষে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
“বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৭ই এপ্রিল এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়।
১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলার আ¤্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করে। পাশাপাশি এদিন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুমোদন করা হয়। সেদিন থেকে এ স্থানটি ‘মুজিবনগর’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
ঐতিহাসিক এ দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতাকে। শ্রদ্ধা জানাচ্ছি মুক্তিযুদ্ধের শহীদ এবং নির্যাতিত মা-বোনকে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। আমি সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করছি।
১৯৭১ সালের ২৬-এ মার্চের প্রথম প্রহরে, জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী মুক্তিকামী বাঙালি জাতি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝঁ^াপিয়ে পড়ে। ১৭ই এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও সরকার পরিচালনা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে।
স্বাধীনতার স্বপক্ষের রাজনৈতিক দলসমূহ, সশস্ত্রবাহিনী, পুলিশ ও তদানীন্তন ইপিআরসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এই সরকার দীর্ঘ ৯ মাস দক্ষতার সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর মিত্রশক্তির সহায়তায় চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। বিশ্বের বুকে জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ।
স্বাধীনতার সাড়ে ৩ বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে সমূলে ধ্বংস করার লক্ষ্যে আড়াই মাসের ব্যবধানে ৩রা নভেম্বর জেলখানায় মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী চার জাতীয় নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
জাতির পিতাকে হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর বাংলাদেশে কোনো গণতন্ত্র ছিল না। আইনের শাসন ও জনগণের অধিকার সামরিক স্বৈরাচারের বুটের তলায় পিষ্ট হয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হয়। স্বাধীনতা বিরোধীদের রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদার করা হয়। জনগণের ভোটে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর দেশে আবারও গণতন্ত্র ফিরে আসে। মানুষ ফিরে পায় তাদের অধিকার। ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসনকাল ছিল বাংলাদেশের জন্য স্বর্ণযুগ।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের প্রচলিত আদালতে বিচার ও রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি দায়মুক্ত হয়েছে। জেলখানায় নিহত চার জাতীয় নেতা হত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন করা হয়েছে। ‘৭১-এর মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে। আমরা পাকিস্তানি বাহিনী এবং তার দোসরদের নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ শুরুর দিন ২৫-এ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করছি।
আওয়ামী লীগ সরকার মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা দেশের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়ন করছি। গত ১০ বছরে আমরা দেশের প্রতিটি খাতে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি অর্জন করেছি। আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ‘রোল মডেল’। আওয়ামী লীগ একটানা সরকারে থাকার কারণে তৃণমূলের জনগণ আজ উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আগামী প্রজন্ম পাবে সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ।
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমি দেশবাসীকে জাতির পিতার অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু,
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat