×
ব্রেকিং নিউজ :
শিগগিরই মাগুরায় রেললাইন চালু হবে : রেলমন্ত্রী কুকি-চিনের নারী শাখার সমন্বয়কসহ দুইজন বান্দরবানের কারাগারে সুনামগঞ্জে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের দাফন সম্পন্ন রাঙ্গামাটির লংগদুতে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত ২ জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কেউ যেন বৈষম্যের শিকার না হন: রাষ্ট্রপতি সরকারের ধারাবাহিকতার জন্যই দেশে এতো উন্নয়ন হয়েছে : ওবায়দুল কাদের শুদ্ধাচার নিশ্চিতকরণ ছাড়া এসডিজি অর্জন সম্ভব নয় : চট্টগ্রামে টিআইবি কংগ্রেসম্যানদের সই জালকারী বিএনপি একটা জালিয়াত রাজনৈতিক দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যবসা সম্প্রসারণে ইএসজি কমপ্লায়েন্স রিপোটিং স্ট্যান্ডার্ড থাকা জরুরী সোনালী আঁশ পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনতে চাই : বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী
  • প্রকাশিত : ২০১৮-০৪-২২
  • ১১৫৬ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিনিধি:- পাকিস্তান আমলে সিভিল সার্ভিস অফ পাকিস্তান (সিএসপি) পাকিস্তান পুলিশ সার্ভিস (পিএসপি) ইস্ট পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস (ইপিসিএস) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ছিল অত্যন্ত কঠিন। যারা এসকল পরীক্ষায় পাস করতেন তাদের সাবডিভিশনাল অফিসার (এসডিও), সাবডিভিশনাল পুলিশ অফিসার (এসডিপিও) ডিপুটি সুপারেনটেন্ট অফ পুলিশ (ডিএসপি) অথবা সচিবালয় কিংবা পুলিশ সার্ভিসের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন পদে চাকরি দেওয়া হতো। ধাপে ধাপে বিভিন্ন সাক্ষাৎকার ও পরীক্ষা নেওয়ার পর সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেতেন প্রার্থীরা। অনেক যাচাই বাছাই করার পর এসকল পরীক্ষায় প্রার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারতেন। এসকল পরীক্ষায় মূলত সাধারণ মেধাতালিকা থেকে ছাত্র ছাত্রীরা সুযোগ পেলেও পরে কোটার ভিত্তিতে ও ফলাফল দেখে নিযুক্ত করার নিয়ম ছিল। এই কোটাভিত্তিক নিয়োগের নিয়ম ব্রিটিশ আমলেও ছিল। সুতরাং কোটা প্রথাকে বাংলাদেশের নুতন কোনো আইন হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। এই কোটা ছিল কোটা আছে, কোটা থাকবে। কোটা ব্যবস্থা শুধু সাংবিধানিকভাবেই সুরক্ষিত নয়, বরং জাতিসংঘের মানবাধিকারের সার্বজনীন যে ঘোষণাপত্র আছে তার দ্বারাও স্বীকৃত। যারা আন্দোলনে নেমেছিলেন তারাও কিন্তু সম্পূর্ণ কোটা প্রথা বাতিলের দাবি জানায়নি। বলেছে, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য সংরক্ষিত সংখ্যার পরিমাণ কমিয়ে আনার জন্য। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ আমল থেকে যে নিয়মটির প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হতো তা হলো, পরীক্ষার্থীরা ছাত্র অবস্থায় দেশের আইন শৃঙ্খলাভঙ্গের সাথে কখনো জড়িত ছিলেন কি না। কিংবা কোনো বেআইনি কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছেন কি না। এটি তা গোয়েন্দা রিপোর্টের মধ্যে দিয়ে যাচাই করে দেখা হতো। কারণ যাদের হাতে একদিন দেশের প্রশাসনের দায়িত্ব অর্পণ করা হবে তারা যদি ছাত্র অবস্থায় নিজেরাই আইন ভঙ্গ করেন, বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকেন তাহলে সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত হওয়ার পর তারা সহজেই ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন কাজে লিপ্ত হতে পারেন। শুধু তাই নয় পরিবারের বিষয়টিকেও এখানে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেওয়া হতো। সবশেষে গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে এসকল পরীক্ষায় প্রার্থীদের অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া হতো। মন্ত্রী কিংবা রাজনীতিবিদদের তদবির এখানে প্রাধান্য দেওয়া হতো না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর সরকার ব্রিটিশ, ইন্ডিয়া ও পাকিস্তানের মতই বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষা চালু করেন। এইসময় থেকেই অন্যান্য কোটার সাথে মুক্তিযুদ্ধাদের বিসিএস পরীক্ষায় পৃথক কোটা সুযোগের নিয়ম করা হয়। অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা প্রথা চালু করা হয়। যতটুকু মনে পরে বঙ্গবন্ধু সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খুব সহজেই পৃথক বিসিএস পরীক্ষার ব্যবস্থাও করেছিলেন যার নাম দেওয়া হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা বিসিএস।তবে সবসময় বি সি এস পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি কোটা রাখার নিয়ম ছিল। এই নিয়মের অধীনে বাংলাদেশের প্রশাসনে অনেক মুক্তিযোদ্ধারা চাকরির সুযোগ পেয়েছিলেন। বর্তমানে হাতে গোনা দুই একজন ছাড়া প্রশাসনে আর কোনো মুক্তিযোদ্ধা নাই বললেই চলে। কারণ আজ থেকে ৪৬ বৎসর সাত মাস পূর্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। ১২ বৎসর বয়সে যদি কেউ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে থাকেন তাহলে তার বয়স এখন ৫৮ হওয়ার কথা। এই কারণে পরবর্তীতে সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য কোটা চালু করে। সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের করা আন্দোলনের মূল দাবি ছিল মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত কোটার পরিমাণ কমানো। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা রাখার নিয়ম রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে জেলা ভিত্তিক, নারী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা আছে। সরকারি চাকরিতে সব মিলিয়ে ৫৬ শতাংশ কোটা আছে। এখন প্রশ্ন হলো তাদের এই আন্দোলন কতটুকু যুক্তিসঙ্গত? যেভাবে তারা আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছিল তার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু? যারা একদিন দেশের প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করবে তাদের বেলায় এভাবে আন্দোলন করার পথ আদৌ সঠিক কি না? উপাচার্যের বাসভবন তছনছ, ব্যাপক ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেওয়াকে কি আন্দোলন বলা যায়? নিশ্চই না। এ ধরনের পথকে আমরা কখনোই সমর্থন জানাতে পারি না। এক সময় মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি যেভাবে জ্বালাও পোড়াও করে দেশের পরিস্থিতিকে অস্বাভাবিক করে তুলেছিল আজ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের নামে এ ধরনের ধ্বংসাত্মক পথ কেন বেছে নিয়েছিল? শিক্ষার্থীরা সরকারের কাছে যে প্রধান বিষয়টি নিয়ে দাবি জানিয়েছে তা নিয়ে সরকারের অবশ্যই নুতন করে চিন্তা ভাবনা করার প্রয়োজন রয়েছে। বর্তমান অবস্থায় নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপর ছাত্র নেতাদের সাথে আলোচনা করার দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। শক্তি নয় আলোচনার মধ্যে দিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধান বের করা সরকারের দায়িত্ব। এমতাবস্থায় আলোচনার পথে না গিয়ে অন্য কোনো শক্তি প্রয়োগ কখনো সঠিক হবে না। শক্তির মহড়া দেখানোকে আমরা কখনোই গণতন্ত্রের ভাষা বলতে পারি না। সরকারের নীরবতা বা নম্রতা পরিস্থিতিকে অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আন্দোলনের নামে যারা ভিসির বাসভবন আক্রমণ, জ্বালাও পোড়াও আর ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড করেছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আইনভঙ্গকারীদের অবশ্যই আইনের কাঠ গোড়ায় দাঁড়াতে হবে। গোয়েন্দা রিপোর্টের মাধ্যমে এদের নজরে আনার প্রয়োজন রয়েছে। ব্রিটিশ, পাকিস্তান আমলের মতো বাংলাদেশেও বিসিএস পরীক্ষার্থীদের বেলায় গোয়েন্দা রিপোর্টের প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার কথা সামনে আনা যেতে পারে। যতটুকু জানি এই নিয়মটি সামরিক বাহিনীতে কমিশন পাওয়ার ক্ষেত্রে এখনো প্রযোজ্য। তবে তারা পাকিস্তান ও ব্রিটিশ আমলের মতো বিষয়টিকে কতটুকু গুরুত্ব দিচ্ছেন তা উত্তর একমাত্র তারাই দিতে পারবেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে এক ঘোষণায় পুরো কোটা প্রথাকে বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ শিক্ষার্থীরা এ দাবি জানায়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এভাবে নির্দেশ দেওয়ার কোনো অধিকার আছে কি না এনিয়ে কিছু কিছু রাজনীতিবিদ ও সুশীল সমাজ কথা তুলেছেন। শেখ হাসিনার বক্তব্য শুনলে পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে, তিনি অত্যন্ত দুঃখ কষ্টে একথাগুলো বলেছেন। সুতরাং বিষয়টি নিয়ে তার নুতন করে চিন্তা করা উচিত। যেখানে শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কোটা কমিয়ে আনলেই হয় সেখানে পুরো কোটা প্রথাকে এভাবে বাতিল করাটা সঠিক নয় বলে অনেকে মনে করছেন। আন্দোলনকারী ছাত্র নেতারাও বলেছেন তারা শুধু মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কোটার পরিমাণকে কমিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন, তারা পুরো কোটা প্রথার বিরুদ্ধে নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আদেশ এখনো সরকারিভাবে প্রকাশ করা হয়নি। সুতরাং লন্ডন থেকে ফিরে এসে শেখ হাসিনা আন্দোলনরত ছাত্র নেতাদের সাথে আলোচনার মধ্যে দিয়ে বিষয়টির মীমাংসা করতে পারেন। তা না হলে সুযোগ সন্ধানীরা রাজনীতির মাঠে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করলেও করতে পারে। নির্বাচনের বছরে সরকারকে সবকিছু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করাটাই হবে মহত্বের লক্ষণ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat