বাংলাদেশকে জঙ্গির দেশ বানানোর চক্রান্ত হয়েছিল : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিনিধি: –
বাংলাদেশকে জঙ্গির দেশ বানানোর চক্রান্ত হয়েছিল বলে তথ্য দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান খান কামাল। তবে এই দেশের জনগণের জন্য সেটা সম্ভব হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
রোববার (১৬ এপ্রিল) চট্টগ্রামে এক সভায় মন্ত্রী বলেন, এই দেশের মানুষ জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় না। এই দেশের মানুষ সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় না। এই দেশের মানুষ ধর্মভীরু কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। সেজন্যই বাংলাদেশকে সন্ত্রাসী কিংবা জঙ্গির দেশ বানানোর যে চক্রান্ত হয়েছিল, সেটা সম্ভব হয়নি।‘এই দেশের মানুষ নিজের দেশের জন্য মরতে জানে। এই দেশের মানুষ ভাষার জন্য মরেছে, স্বাধীনতার জন্য মরেছে। পাশের বাসার প্রতিবেশিটার জন্য জীবন দেয়। সেই মানুষ বাংলাদেশের মানুষ।ইসলামকে জঙ্গির ধর্ম বানানোর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে জঙ্গিবাদি কর্মকান্ড ঘটানো হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির বিশেষ সভায় মন্ত্রী আরও বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, মানবতার ধর্ম। এখানে মানুষ হত্যার স্থান নেই। যে ইসলামকে আমরা সর্ব্বোৎকৃষ্ট ধর্ম হিসেবে হৃদয়ে ধারণ করি, সেই ধর্মের নাম করে কেন মানুষ হত্যা করা হচ্ছে ?‘একটা ষড়যন্ত্র প্রতিনিয়ত চলছে। এটা বুঝতে হবে। আজকে ইসলাম ধর্মকে জঙ্গির ধর্মে রূপান্তরিত করার জন্য চক্রান্ত চলছে। বিশ্বে কথা হচ্ছে, অল হিউম্যান আর নট টেররিস্ট বাট অল টেররিস্ট আর মুসলিমস (সকল মানুষ সন্ত্রাসী নয়, কিন্তু সকল সন্ত্রাসীই মুসলিম)। মুসলিমদের এই জায়গায় নেয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনাগুলো ঘটানো হচ্ছে।মন্ত্রী বলেন, টার্গেট কিলিং হয়েছে। বিভিন্ন ধর্মপ্রধানদের হত্যা করার চেষ্টা করেছে। এরপর বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক টিভি মিডিয়ার প্রচার হল যে, অমুক করেছে। আমরা খুঁজে দেখলাম, যাদের নাম প্রচার হচ্ছে তাদের সঙ্গে দেশের জঙ্গিদের কোন সংশ্লিষ্টতা আছে কি না। দেখলাম কোন সংশ্লিষ্টতা নাই, এরা সবাই আমাদের দেশিয় জঙ্গি। হিডেন জঙ্গি যেগুলো সবসময় ঘাপটি মেরে থাকে, সুযোগ পেলেই উপরে উঠে।‘সবগুলোই আমাদের দেশের জঙ্গি, এগুলো কোন বাইরে থেকে আসে নাই। এখানেই বিভিন্নভাবে তারা আত্মপ্রকাশ করেছে দেশকে অকার্যকর বানানোর জন্য। এই যে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি সেটাকে বন্ধ করার জন্য তারা কাজ করছে।জঙ্গি কর্মকাণ্ড বন্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।জঙ্গিদের অর্থায়ন বন্ধের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের একটা কমিটি আছে। আমরা সব ইনফরমেশন গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। এনজিও জঙ্গি অর্থায়ন করে বলে একটা কথা এসেছে। সব এনজিও আমাদের গোয়েন্দা নজরদারিতে আছে। তথ্য থাকলে সবাই দিন, আমাদের পুলিশ কর্মকর্তারা নজর রাখবেন এবং ব্যবস্থা নেবেন।খুৎবার আগে বয়ানের সময় সব ইমাম যেন জঙ্গিবিরোধী বক্তব্য দেন সেটা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
‘আমরা ইমাম সাহেবদের বলেছি যে জঙ্গিবাদ নিয়ে কথা বলতে হবে। প্রত্যেক ইমামকে বলেছি, এই যে যুবকরা ভ্রান্ত একটা ধারণা নিয়ে জীবন দিয়ে দিচ্ছে, এসব নিয়ে কথা বলতে হবে। অনেক ইমাম সাহেবই খুৎবার আগে বয়ানের সময় এটা বলছেন। কোন কোন জায়গায় এখনও হচ্ছে না, এটা আমরা জানি। এখন আপনাদের (প্রশাসন) দায়িত্ব হবে, সব ইমাম সাহেব ইসলাম ধর্মে যে মানুষ হত্যা ও জঙ্গিবাদের কোন স্থান নেই সেটা যেন বলেন, সেই ব্যবস্থা করেন।জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো.সামসুল আরেফিনের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম, সিএমপির উপ কমিশনার এস এম মোস্তাইন হোসেন, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা, র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা কমান্ডার মো.সাহাবউদ্দিন ও মহানগর কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ, সরকারি কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ আইয়ূব ভূঁইয়া, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ ও সিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস।জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, আব্দুল জব্বার, মোহাম্মদ আলী শাহ, তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাবু, পৌর মেয়র গিয়াস উদ্দিন, নিজাম উদ্দিন, বদিউল আলম বক্তব্য রাখেন।এছাড়া জেলা পিপি আ ক ম সিরাজুল ইসলাম, চেম্বার পরিচালক একেএম আকতার হোসেন, পরিবহন শ্রমিক নেতা আব্দুল মান্নানও বক্তব্য রাখেন।