×
ব্রেকিং নিউজ :
খাগড়াছড়িতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের ঋণ বিতরণ বরগুনায় স্বেচ্ছাসেবকদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষন পিরোজপুরে বিশ্বকবি ও জাতীয় কবির জন্মবার্ষিক উদযাপনে প্রস্তুতি সভা রাঙ্গামাটিতে বজ্রপাতে দুইজন নিহত নাগরিকতা সিভিক এনগেজমেন্ট ফান্ড (সিইএফ)-এর উদ্বোধন হাসপাতাল থেকে বাসায় নেওয়া হয়েছে খালেদা জিয়াকে শনিবার থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান চলবে উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে কাজ করতে মন্ত্রী-এমপিদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও গাজা,ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাজ্যকে পাশে চায় বাংলাদেশ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অ্যাকশন প্ল্যান প্রস্তুত করতে হবে : স্পিকার
  • প্রকাশিত : ২০২৩-১১-১৪
  • ৫৬৮৪৮ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক
বরগুনা জেলার তালতলী পাড়া, ছাতন পাড়া, মনুখে পাড়া, আগাঠাকুর পাড়া, নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নের সওদাগর পাড়া, তালুকদার পাড়া ও সোনাকাটা ইউনিয়নের কবিরাজ পাড়া, নামিষে পাড়া, লাউ পাড়া ও অংকুজান পাড়াসহ রাখাইন পাড়াগুলোতে ১২ থেকে ১৪টি করে শতাধিক হস্তচালিত তাঁত রয়েছে। কোনোকোনো এলাকায় একই পরিবারে দুই থেকে তিনটিও তাঁত রয়েছে। কলাপাড়া, কুয়াকাটা, মিস্ত্রিপাড়া, ছাতিয়ানপাড়া, মৌডুবি ও গলাচিপায় রয়েছে আরও দুই শতধিক তাঁত। এসব তাঁতে ৬ শ’র বেশী পেশাদার নারী তাঁতি কাপড় বুনন করে থাকেন। বরগুনা ও পটুয়াখালী অঞ্চলের রাখাইন নারী তাঁতিদের উৎপাদিত চাদর, শার্ট পিস, ব্যাগ, শাড়ি, লুঙ্গী, গামছা প্রভৃতি বস্ত্রের কদর দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের সর্বত্রই রয়েছে।
মিয়ানমার থেকে আমদানি করা বিভিন্ন রঙ বে-রঙয়ের সুতা দিয়ে হস্তচালিত তাঁতে তৈরী রাখাইনদের কারুকাজ খচিত বস্ত্রের চাহিদা সারা বছর খুব বেশি না থাকলেও শীত মওসুম ও ঈদে ব্যাপক চাহিদা দেখা যায়। শীত মৌসুমও শুরু হয়েছে। সকাল, বিকেল ও রাতের ঠান্ডা শীতের আগমণী বার্তা দিচ্ছে উপকূলের মানুষকে। শীতের আগমণে বরগুনার রাখাইন তাঁতিদেরও, ব্যস্ততা বাড়ছে কাপড় বোনায়।
মৌসুমী এ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড গত কয়েক বছর ধরে মোটামুটি সারা বছরই চালু থাকে বলে জানান রাখাইন নারী তাঁতিরা। তারা কারণ হিসেবে জানান, বরগুনার তালতলী উপজেলায় তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র, জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প, সোনাকাটা ইকোপার্ক, পাথরঘাটার হরিণঘাটা, লালদিয়ার চরে পর্যটনস্পট, পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ায় পায়রা সমুদ্র বন্দর, ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, নৌ ঘাঁটি, দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন, কুয়াকাটার পর্যটন কেন্দ্রের জন্য চাহিদা বেড়ে যাওয়াকে।
১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা ও কলাপাড়া উপজেলার কালাচানপাড়া, গোড়াআমখোলাপাড়া, দিয়ারআমখোলাপাড়া, নয়াপাড়া, নাইউরী পাড়া, মংথয়পাড়া, থঞ্জুপাড়া, মিশ্রিপাড়া, লক্ষ্মীপাড়া, বৌলতলীপাড়া, পক্ষীয়াপাড়া, কেরানীপাড়া এবং বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার তালতলীপাড়া, ছাতনপাড়া, গোড়াঠাকুরপাড়া, আগাঠাকুরপাড়া, মনুসেপাড়া, অংকোজানপাড়া, তাতেপাড়া, লাউপাড়া, নামেসেপাড়া, কবিরাজপাড়া, সওদাগাড়পাড়া ও তালুকদারপাড়ায় রাখাইনরা স্থায়ীভাবে বসবাস করা শুরু করে। চল্লিশ দশকের শেষভাগে এ অঞ্চলগুলোতে ২৪২টি রাখাইন পাড়া বা পল্লী ছিল।
রাখাইনদের তাঁত শিল্পের ঐতিহ্য বহু পুরনো। নিজেদের প্রয়োজন মেটাতেই রাখাইনরা এক সময় তাঁত বস্ত্র বয়ন শুরু করেছিল। তারা তৈরি করত লুঙ্গি ও চাদরসহ আরও অনেক কিছু। লুঙ্গি ও চাদর ছাড়াও ফতুয়া, হাফ শার্ট, ভ্যানিটিব্যাগ, বালিশের কাভার আছে তাদের পণ্য তালিকায়। এর মধ্যে লুঙ্গি ও চাদরের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। চাদরের মধ্যে যেমন শীতে গায়ে দেয়া চাদর রয়েছে; তেমনি রয়েছে বিছানার চাদর। কালের পরিক্রমায় এগুলো এখন স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে সমাদর পেয়েছে পর্যটকদের কাছেও। পটুয়াখালী বা বরগুনা অঞ্চলের সাগর পাড়ে বেড়াতে এসে রাখাইন পল্লীগুলোতে যায়নি এমন পর্যটকের সংখ্যা খুব বেশি নয়। পর্যটকদের সুবিধার্থে কুয়াকাটায় গড়ে তোলা হয়েছে রাখাইন মার্কেট। সেখানকার কয়েকটি স্টলে রাখাইনরা নিজেরাই নিজেদের পণ্য বেচাকেনা করে।
রাখাইন পল্লীগুলোতে ঢুকলেই কানে আসবে রাখাইন নারীদের তাঁতের টুকটাক শব্দ। কেউ ব্যস্ত সুতা ছাড়ানোর কাজে; কেউ রঙের কাজে। আবার কেউবা দুই হাতে সমানে ব্যস্ত তাঁতে। রাখাইন নারীরাই প্রধানত এ পেশায় জড়িত। ছাতিয়ানপাড়ার রাখাইন তরুণী নো মাও জানালেন, ‘আমরা রাখাইনরা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পোশাক হিসেবে লুঙ্গি ব্যবহার করি। কখনই বাইরের তৈরি লুঙ্গি ব্যবহার করি না। বাপ-দাদারা নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে তাঁতে লুঙ্গি বুনতেন। আমরা সে ঐতিহ্য ধরে রেখেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের লুঙ্গি বা চাদরের দাম তুলনামূলক কিছু বেশি হলেও টেকে বেশিদিন। যে কারণে স্থানীয়রাও আমাদের লুঙ্গি ব্যাপক হারে কেনে।’ তালুকদার পাড়ার রাখাইন বাবু জানান, গায়ে দেয়া একখানা চাদর বুনতে সময় লাগে কমপক্ষে দু’দিন। সুতা বা উল লাগে ৪শ থেকে ৫শ টাকার। তারা সেটি বিক্রি করেন ৭শ থেকে ৮শ’ টাকায়।
তালতলী উপজেলার আগাঠাকুর পাড়ার উসিট মং জানান, এক সময়ে তাঁত বস্ত্রের উপরই নির্ভরশীল ছিল রাখাইন পরিবারগুলো। রাখাইন পরিবারের মধ্যে এমন প্রচলন ছিল যে, মেয়েরা হস্তচালিত তাঁত শিল্পের কাজ না জানলে তাদের বিয়ে হত না। রাখাইনদের তাঁতে প্রথম দিকে পরিবারের চাহিদা মেটাতে কাপড় বোনা হতো। পরে তারা বাণিজ্যিক পরিসরে এ কাজ শুরু করলে দেশব্যাপী তার কদর বাড়ে ঠিকই তবে যথার্থ পদ্ধতিতে বিপণন বা রপ্তানী না করতে পারায় এবং সীমিত সংখ্যক ক্রেতা ও চাহিদার কারণে এ শিল্প বেশীদূর যেতে পারেনি। বর্তমানে উপকূলে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ডে জনসমাগম বেড়েছে, বেড়েছে বিকিকিনিও। তাছাড়া যোগাযোগ মাধ্যমের উন্নতির সাথেসাথে তাদের পন্যের পসার ঘটবে বলে রাখাইনরা আলাপ কালে আশা প্রকাশ করেছেন।
বরগুনার রাখাইন কমিউনিটি নেত্রী ও স্কুল শিক্ষিকা অংতেন তালুকদার জানিয়েছেন, এ অঞ্চলে বসবাসরত রাখাইন সম্প্রদায়ের লোক সংখ্যা দিনদিন কমে যাচ্ছিল। কর্মসংস্থানের অভাবই ছিল তার প্রধান কারণ। বর্তমান সরকার আন্তরিকতায় এ অঞ্চলের প্রভূত উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা আমাদের ঐতিহ্য ও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারব।                                                                     

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat