আমাদের দেশে বাজেট করার আগে গণমানুষের সাথে কোনো আলোচনা হয়, সেটা দেখিনি : ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
নিজস্ব প্রতিনিধি: –
আগামী বছর হলো নির্বাচনের আগের বছর। ফলে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট হবে নির্বাচনী বড় আকারের বাজেট বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেছেন, আমাদের দেশে বাজেট করার আগে গণমানুষের সাথে কোনো আলোচনা হয়, সেটা দেখিনি। জনপ্রতিনিধি বা সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণ না থাকায় বাজেট বাস্তবায়ন হয় না। নির্বাচনের আগে সরকার বড় ধরনের কোনো সংস্কার কাজে হাত দেবে কিনা সেটা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ব্যয় করার সামর্থ্য না বাড়িয়ে সরকার কেন বড় বাজেটে যাবেন? টাকার বিনিময় হার কিছুটা অবমূল্যায়ন করা উচিত। জ্বালানি তেলের দাম কমাতে হবে।আজ রোববার মহাখালীস্থ ব্র্যাক ইন সেন্টারে আগামী জাতীয় বাজেট ২০১৭-২০১৮ বিষয়ে সংস্থাটির সুপারিশ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আশঙ্কা প্রকাশ করে এসব কথা বলেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। আর উপস্থাপনা তুলে ধরেন রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। এ সময় ব্যাংকিং ব্যবস্থার ভিত মজবুত ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর ওপরও জোর দেয়ার সুপারিশ করা হয়।সিপিডির পেলো ড. দেবপ্রিয় বলেন, বাজেট কি আমলার সংখ্যানির্ভর নাকি রাজনৈতিক সদিচ্ছা? নির্বাচনের আগে আর্থিক ভ্রমের আয়তন বৃদ্ধি পায়। রাজনৈতিক অর্থনীতি যদি ঠিক করা না যায় তাহলে বরাদ্দ বৃদ্ধি প্রবৃদ্ধির আকার কোনো আসে যায় না। তিনি বলেন, বাস্তবভিত্তিক পর্যালোচনা ছাড়াই আমাদের এখানে বাজেট করা হয়। বড় বাজেট নামে কল্পকাহিনী। আমাদের আর্থিক সামর্থ্য কিছুটা বাড়লেও ব্যয়ের সক্ষমতা বাড়েনি। তিনি বলেন, পরোক্ষ করের বিপরীতে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানো না হলে ন্যায়বিচারের ব্যাঘাত ঘটবে। পণ্য রফতানিতে দুর্বল প্রবৃদ্ধি, রেমিট্যান্সে নেতিবাচক অবস্থা।তিনি বলেন, ব্যক্তি খাতকে প্রতিযোগিতামূলক রাখতে হলে উৎপাদন ব্যয়ে সরকারকে সমর্থন দিতে হবে। জ্বালানি তেলের দাম কমাতে হবে, মাঝারি শিল্পে সমর্থন দিতে কর রেয়াত দিতে হবে, বিশেষ অর্থনৈতিক জোনের কাজ দ্রুত করতে হবে। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু প্রকৃত ব্যয় সাম্প্রতিক সময়ে কমে গেছে। এটাকে বাড়াতে হবে।অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা বাজেট অনেক বড় করছি। কিন্তু এই বড় বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা নিয়ে এখন প্রশ্ন। তবে গুণগত মান দেখতে হবে। বাড়াতে হবে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর দক্ষতা। তিনি বলেন, সরকার এখন বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে এখন প্রশ্ন আসবে। তাই আগামীতে এসবের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে। তিনি বলেন, জনগণ বাজেট থেকে যাতে সুফল পায়, সেজন্য বাজেটকে বিকেন্দ্রীয়করণ করতে হবে। যেটা অনেক আগে থেকেই বলা হচ্ছে।সিপিডি বলছে, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি নিম্নগামী রয়েছে। তবে খাদ্যে মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে। গত মৌসুমে আমনের সময় উৎপাদন ভালো হয়নি। ফলে চালের মজুদও কমে হয়েছে। এর কারণে চালের আমদানি বৃদ্ধি করতে হবে এবং চালের দামও বাড়বে। দেশে ব্যাংকগুলো বাজে অবস্থায় যাচ্ছে। সুদের হারের সঙ্গে ব্যাংকের ডিপোজিট রেটের পার্থক্য বাড়ছে।