×
ব্রেকিং নিউজ :
সাফ শিরোপা জয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যক্রমে ‘জুলাই অভ্যুত্থান ২০২৪’ অন্তর্ভুক্ত করা হবে বিএনপি’র লিয়াজোঁ কমিটি ও গণঅধিকার পরিষদের মতবিনিময় ছাত্রদল ইতিবাচক রাজনীতিতে বিশ্বাসী : নাসির উদ্দিন নাসির রাঙ্গামাটিতে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে প্রশাসন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ শহিদ সাংবাদিকদের পরিবার ও আহতদের পাশে থাকবে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট : নাহিদ ইসলাম যত দ্রুত সম্ভব গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন : মির্জা ফখরুল দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর হাসিনার প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া শুরু হবে : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সংস্কার হতে হবে টেকসই, যেন আপত্তিকর চর্চার পুনরাবৃত্তি না হয় : ফলকার
  • প্রকাশিত : ২০১৭-০৫-০৮
  • ৬২৫ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক
বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও পুঁজি সংকট কৃষি যন্ত্রাংশ তৈরি শিল্পকারখানার
নিজস্ব প্রতিনিধি:- বগুড়াসহ দেশের নানা প্রান্তে গড়ে উঠেছে কৃষি যন্ত্রাংশ তৈরি কারখানা। এসব কারখানায় তৈরি কৃষি যন্ত্রাংশ দেশের চাহিদার ৮০ শতাংশ পূরণ করছে। অথচ বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও পুঁজি সংকট, ব্যাংকঋণ, শিল্প জোনসহ নানা সমস্যায় বিকশিত হতে পারছে না কৃষি যন্ত্রাংশ তৈরি শিল্পকারখানা। বার্ষিক টার্নওভার দেড় হাজার থেকে দুই হাজার কোটি টাকা, যা দেশের অর্থনীতির বিকাশে বড় ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে এ শিল্পে কর্মসংস্থান হচ্ছে প্রায় দুই লাখ মানুষের। ইতিমধ্যে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ভারত, নেপাল ও ভুটানে স্থান করে নিয়েছে এসব কৃষি ও সেচযন্ত্র। গুণগত মান ও প্রতিযোগিতামূলক দামের কারণে বৈধ-অবৈধ দুই পথেই দেশের বাইরে যাচ্ছে এসব শিল্পপণ্য। এ শিল্পকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হলে প্রথমেই দরকার একটি নির্দিষ্ট প্রসেসিং জোন বা স্থায়ী শিল্প এলাকা, স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ, দক্ষ শ্রমিক, আধুনিক যন্ত্রাংশ, চাহিদামতো কাঁচামাল ও গ্যাসের সরবরাহ। পাশাপাশি বিদেশ থেকে ফিনিশ পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করাসহ দেশি পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে ট্যাক্স কমালে এই শিল্পে বিপ্লব ঘটবে। কারণ, এখানে তৈরি এসব যন্ত্রপাতির মান চীন ও জাপানের যন্ত্রপাতির চেয়ে কোন অংশেই কম নয়। সরকার একটু নজর দিলে রপ্তানি বাজারে বিশাল অবদান রাখতে সক্ষম এই শিল্পখাত।সাধারণত ভাঙা জাহাজের লোহা লক্কড়সহ পরিত্যক্ত লোহা গলিয়ে এসব কৃষি যন্ত্রাংশ তৈরি হয়। স্রেফ বগুড়ায় এ ধরনের ফাউন্ড্রি শিল্প রয়েছে প্রায় ৫২ থেকে ৫৫টি। এছাড়া বিভিন্ন ছোট, বড় ও মাঝারি মানের কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ও ওয়ার্কশপ রয়েছে ১২০০ থেকে ১৫০০টি। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে এসব কারখানা ও ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ।এসব কারখানায় তৈরি যন্ত্রাংশের মধ্যে রয়েছে পানির পাম্প, টিউবওয়েল, সেন্টিফিউগাল পাম্প, লাইনার, পিস্টন, শ্যালো ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ, সাইকেল, রিকশা পার্টস, রিং, সিস্নপ, নজেল, জুট মিলের যন্ত্রাংশ, প্লিনার, ক্রাংকশফট গ্রানডিং, মিলিং, সেপার, বোরিং মেশিন, বিভিন্ন ধরনের লেদ মেশিন, টিউবওয়েল, থ্রেচার মেশিন, চেসিস, পাওয়ার টিলারের চাকা, ফলা, ট্রলি, ধান ভাঙা ও ভুট্টা মাড়াই এবং আখ মাড়াইয়ের মেশিনসহ প্রায় সব কৃষি উপকরণাদি। দেশের প্রত্যন্ত এলাকার ক্রেতারা এখান থেকে কৃষি যন্ত্রাংশ কিনে নিয়ে যায়। কিন্তু কৃষিভিত্তিক শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও নানান সমস্যার কারণে তা দ্রুত অগ্রসর হতে পারছে না। এইসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারলে এখানে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ কৃষি যন্ত্রপাতি বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এ শিল্পে ব্যাংকঋণ বা সরকারি সহযোগিতার পরিমাণ খুবই কম। শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণেরও অভাব রয়েছে। যন্ত্রপাতি তৈরিতে আধুনিক মেশিনারি পেলে এবং কারিগরদের প্রশিক্ষণ দেয়া গেলে এ শিল্প অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে।কয়েক দশকে বগুড়া অঞ্চলে গড়ে উঠেছে কৃষি যন্ত্রাংশ উৎপাদনের প্রায় দেড় হাজার প্রতিষ্ঠান। দেশের কৃষি যন্ত্রাংশের মোট চাহিদার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশেরও বেশি জোগান দিচ্ছে এসব ওয়ার্কশপ। এক সময় চীন, জাপান, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের কৃষি যন্ত্রাংশ এদেশের বাজার দখল করে থাকলেও একটু একটু করে বগুড়ায় তৈরি যন্ত্রাংশ সেই স্থান পূরণ করছে। এতে একদিকে বিদেশি মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে। অন্যদিকে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বগুড়ায় এ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে ২ লাখের বেশি মানুষ।ফোরাম অফ এগ্রো মেশিনারিজ ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড প্রসেসিং জোন, বগুড়ার সভাপতি গোলাম আজম টিকুল বলেন, বগুড়ার কাস্টার দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে বিপ্লব এনে দিয়েছে। তাই এখানে মনোপলি টাইপের শিল্প গড়ে তোলার পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের দেশের মোট চাহিদার শতকরা ৮০ ভাগ কৃষি উপকরণ এখানে তৈরি হলেও এই শিল্প অবহেলিত। সারা বগুড়ায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এই শিল্প। নির্দিষ্ট একটি জোন না থাকলে কখনোই এই শিল্পের বিকাশ সম্ভব নয়। এজন্য বগুড়া বিসিক এলাকা সম্প্রসারণ করে কৃষিভিত্তিক শিল্পকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্লট বরাদ্দ দিতে হবে।তিনি বলেন, আমাদের কারখানায় লোহার যন্ত্রাংশ তৈরি করা হলেও মেটালকে ট্রিটমেন্ট করা হয় না বলে অনেক উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে অপূর্ণতা থেকে যায়। হিট ট্রিটমেন্টের অভাবে তার সঠিক স্থায়িত্ব থাকে না। তাই বগুড়ায় একটি হিট ট্রিটমেন্ট অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি এই খাতের জন্য ৫ শতাংশ হারে ঋণ দেয়ার দাবি জানান। তাহলে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং কাস্টার তৈরি করা সম্ভব হবে। আর ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বেঁচে যাবে। সরকার কৃষি খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে। যদি এই শিল্পে এরকম কোন সুবিধা দেয় তাহলে উৎপাদিত কৃষি যন্ত্রপাতির উৎপাদন খরচ কম হবে। কৃষক কম মূল্যে যন্ত্রপাতি পাবে। এছাড়া চাহিদামতো গ্যাসের সরবরাহ দিতে হবে।বগুড়া ফাউন্ড্রি ওর্নাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আজিজার রহমান মিলটন বলেন, এ শিল্পের প্রধান সমস্যা হচ্ছে কাঁচামাল সংগ্রহ, দক্ষ শ্রমিকের অভাব ও শিল্পের আধুনিকায়ন করা। তিনি বলেন, কর্মরত শ্রমিক ও মালিকদের কোন দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ফাউন্ড্রি শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচা মালামাল আমদানিতে ট্যাঙ্ ও ভ্যাট পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে অনেক বেশি। ফলে চায়না পণ্যের সঙ্গে দেশে উৎপাদিত পণ্য পাল্লা দিয়ে পারছে না। কারণ ফিনিস পণ্য আমদানিতে ট্যাক্স কম আর ভ্যাট নেই। ফলে তারা কম দামে পণ্য বাজারে ছাড়তে পারে। এজন্য ভ্যাট-ট্যাক্স কমালে এ শিল্প স্বনির্ভরতার পথে অনেক খানি এগিয়ে যাবে। শিল্প আধুনিকায়ন করা হলে রপ্তানি খাতেও বিশেষ অবদান রাখতে পারবে। বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল মিয়া বলেন, এ শিল্প রক্ষায় সরকারকেই মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকার আমাদের কিছু প্রণোদনা দিয়েছে। এই প্রণোদনার হার বাড়াতে হবে। এসএমই ফাউন্ডেশন আমাদের ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিয়েছে। এর সুদের হার আরও কমাতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে হলে দক্ষতা বাড়াতে হবে। দক্ষতা বাড়াতে মানসম্মত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া ফাউন্ড্রি শিল্পের কাঁচামাল বালি, কয়লা, ফার্নেস অয়েল, পিক আয়রন, হার্ডকোক, ভাঙা লোহার সংকট; অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি এবং বিদ্যুৎ সংকটে সম্ভাবনাময় এ শিল্প এগুতে পারছে না। এজন্য সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগের প্রয়োজন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat