বিশ্ব জাদুঘর দিবস উপলক্ষে প্রাচীন চট্টগ্রামের সাড়ে চার হাজার বছরের ইতিহাস সংরক্ষণ করে নগর মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠার দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান
রুপন দত্ত.চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:- আজ বিশ্ব জাদুঘর দিবস ২০১৭ এই উপলক্ষে চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র ও ভ্রাম্যমাণ প্রত্নতত্ত্ব আলোকচিত্র মিউজিয়াম এর উদ্যোগে চট্টগ্রামের প্রাচীন ঐতিহাসিক প্রত্নত্তস্থাপনাসমূহ সরকারি উদ্যোগে সংরক্ষণ ও প্রত্নত্ব আইনে সংস্কারের দাবি এবং প্রাচীন চট্টগ্রামের সাড়ে চার হাজার বছরের ইতিহাস সংরক্ষণপূর্বক চট্টগ্রাম নগর মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠার দাবিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বরাবরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান ও চট্ট্রগাম সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র আলহাজ্ব আ.জ.ম নাছির উদ্দিনের বরাবরে স্মারকলিপির মাধ্যমে নগরভবনে চট্টগ্রাম নগর মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠার দাবীতে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।
বিশ্ব যাদুঘর দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রামের সভ্যতার স্মারক প্রাচীন প্রত্নত্ত নিদর্শন, তথ্য উপাত্ত ও ইতিহাসভিত্তিক প্রামাণ্য দলিলসমূহ স্থায়ীরূপে সংরক্ষণের জন্য চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে দাবী জানানো হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র বরাবরে প্রদত্ত স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, পৃথিবীর সভ্যতার ইতিহাসগুলো উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সংরক্ষণ করে বর্তমান প্রজন্মের জন্য উপযুক্ত করে মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করা হয়। সেক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশ অনেকটা পিছিয়ে। চট্টগ্রামে একটি নগর মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে স্মারকলিপিতে বলা হয়, প্রাচীন চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক প্রত্নত্ত সম্পদগুলো ধ্বংসের প্রহর গুনছে। পৃথিবীর বিখ্যাত গ্রন্থ মহাভারতে যে চট্টগ্রামের আদিনাথ, চন্দ্রনাথ, কাঞ্চননাথ এর কথা বারেবারে উল্লেখ আছে সেই সমৃদ্ধ ইতিহাস সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংস হতে চলেছে। এছাড়াও হিন্দু ধর্মীয় প্রথম দুর্গাপূজার স্থান মেধস মুনি’র আশ্রম ও করলডেঙ্গা পাহাড় সংরক্ষণ হয়নি। ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিজড়িত ঐতিহাসিক জালালাবাদ পাহাড়, ইউরোপিয়ান ক্লাব ও হাবিলদার রজব আলীর সিপাহী বিদ্রোহের স্মৃতিজড়িত প্যারেড ময়দান আজও সংরক্ষণ হয়নি। হয়নি ঐ স্থাপনাগুলোর আশেপাশে একটি ন্যূনতম ইতিহাস স্মারকও। চট্টগ্রামে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সহ পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অনেক প্রাচীন স্থাপনা ও ধর্মীয় ধর্মশালা, মসজিদ, মন্দির প্রাচীনত্ব হলেও প্রতœ আইনে সংরক্ষণ তো দূরের কথা এক শ্রেণির লোভী ভূমিদস্যুর কবলে পড়ে অনেক প্রাচীন সম্পদ নষ্ট হয়ে গেছে। প্রাচীন এই সম্পদগুলো প্রতœ আইনে সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য দাবি জানান। বৌদ্ধ ধর্মীয় সভ্যতার প্রাচীন স্মারক পণ্ডিত বিশ্ববিদ্যালয় আনোয়ারায় অবস্থান নির্ণয় করা হয়েছে, কিন্তু এখনো খনন কাজের মাধ্যমে এই প্রাচীন সম্পদ উদ্ধারের কোন ব্যবস্থা সরকার গ্রহণ করেননি। আদিনাথ, চন্দনাথ, কাঞ্চননাথ ও মেধস মুনি’র আশ্রমকে সংরক্ষণ করা, চট্টগ্রাম নগরীর ঐতিহাসিক নবাব ওয়ালিবেগ খাঁ জামে মসজিদ, আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ, কদম মোবারক জামে মসজিদ, হাটহাজারীর ফকিরা মসজিদ, সীতাকুন্ডর হাম্মাদিয়া মসজিদ, পটিয়া লাকসা মসজিদ, ফটিকছড়ির কাজী মসজিদ, ফেলা গাজী মসজিদ, চন্দনাইশের আধু খাঁ জামে মসজিদ, লোহাগাড়ার জঙ্গল পাহাড় আধু খাঁ মসজিদ, বাঁশখালীর ঐতিহাসিক মলকা বানু ও আনোয়ারার মনু মিয়া মসজিদ, চন্দনাইশের কিরাত আমলে নির্মিত ঐতিহাসিক জৈন রাজার বাড়ি, পটিয়ার তেরজুরি (প্রাচীন মাটির ব্যাংক), বাঁশখালীর প্রাচীন বুড়া মন্দির, আনোয়ারার নরসিং মন্দির, আনোয়ারা পরৈকোড়ার যোগশ ও প্রসন্ন বাবুর রাজবাড়ি, দোহাজারির আধু খাঁর বাড়ি সহ চট্টগ্রামের অনেক প্রাচীন প্রত্নত্ত সম্পদ সংরক্ষণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়।